শিরোনাম: |
নির্মলেন্দু গুণ: বন্ধু জয়নাল হাজারীর কিছু স্মৃতি
নির্মলেন্দু গুণ
|
![]() শেখ মুজিবের ছয় দফা কর্মসূচীকে সামনে নিয়ে এই ভূখন্ডের মানুষ বুকের রক্ত দিয়ে তখন সবে বাংলার রাজপথ রাঙাতে শুরু করেছে। ১৯৬৬ সালের ৭ জুন শেখ মুজিবসহ আওয়ামী লীগের হাজার হাজার নেতা ও কর্মীর মুক্তির দাবীতে আহুত দেশব্যাপী সফল ও সর্বাত্মক হরতাল পালিত হওয়ার পর আমরা অনেকে না হলেও কেউ-কেউ টের পেয়ে গিয়েছিলাম– কালের যাত্রার ধ্বনি। আমরা বুঝে গিয়েছিলাম যে, শেখ মুজিবের ৬ দফা আসলে পাকিস্তানের দফারফা। ছয় দফার ভিতরে বপন করা স্বাধীনতার এই স্বপ্নবীজ যাদের উর্বর হৃদয়মৃত্তিকায় অঙ্কুরিত হয়েছিল– তাদের মধ্যে আমি যেমন ছিলাম, তেমনি ছিলেন এই জয়নাল হাজারী। ফলে ফেনীর কবি-সাহিত্যিক ও সাংবাদিক বন্ধুদের সবার দিঠি এড়িয়ে আমাদের দুজনের মধ্যে একটা গভীর-গোপন বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছিলো। আমাদের উভয়ের মাথার ওপর হুলিয়া এবং মনের গভীরে এই ভূখন্ডের স্বাধীনতার স্বপ্ন থাকার কারণে আমরা পরস্পরকে সমীহ করতাম, ভালোবাসতাম এবং সম্মানের চোখে দেখতাম। ময়মনসিংহের আনন্দমোহন কলেজ থেকে পরপর দুইবার ( ১৯৬৫ ও ১৯৬৬) বিএসসি পরীক্ষায় ফেল করার পর কিংকর্তব্যবিমূঢ় অবস্থায় ১৯৬৮ সালে আমি ঢাকায় চলে আসি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলায় অনার্স নিয়ে ভর্তি হয়েছিলাম, “তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন” এই পরিচয়টাকে আমার জীবনীর মধ্যে যুক্ত করার হীন উদ্দেশ্যে। আর কিছু নয়। কিন্তু জয়নাল হাজারী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হননি। তিনি কী করবেন? আমার মতো তিনিও সাময়িকভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে চান কিনা– এরকম প্রশ্নের উত্তরে জয়নাল হাজারী একদিন আমাদের অভিন্নবন্ধু ( মহসীন হল) সাদাত হাসান মান্টোর প্রেমের গল্প অনুবাদ করে সুখ্যাতি অর্জনকারী আখতার-উন-নবীর রুমে, জুয়া খোলার আসরে মুজিব কোটের ভিতরের বুক পকেট থেকে ভাঁজ করে সযতনে লুকিয়ে রাখা একটি ছোট্ট পত্র বের করে আমাকে দেখিয়েছিলেন। [১] রাজধানীসহ সারাদেশে নাশকতার পরিকল্পনা ছিলো জামায়াতের ≣ বাজেট বাস্তবায়নে পরিকল্পনার তাগিদ ≣ [১] বুড়িচংয়ে অভিনব কৌশলে অটোরিকশা চুরি; মহিলাসহ আটক ২ হাজারী এমন সযতনে মুজিব কোটের ভিতরের পকেট থেকে ঐ পত্রটি বের করেছিলেন যে আমার মনে হয়েছিলো তিনি বুঝি তার কোনো প্রেমিকার লেখা প্রেমপত্র বের করেছেন। তিনি অন্য কাউকে না দিয়ে ঐ পত্রটি আমার হাতে দিলেন। তাতে আমি সম্মানিত বোধ করলাম। পত্রটি পাঠ করার পর আমি আমার চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। আমি ভুল দেখছি না তো? যে-নেতাকে আমি আমার বুকের গভীরে স্থান দিয়েছি, যাকে নিয়ে আমি দীর্ঘ কবিতা রচনা করেছি, [ হলুদ চোখ, সুবর্ণ গোলাপের জন্য, প্রচ্ছদের জন্য, সংবাদ সাহিত্য সাময়িকী, ১২ নভেম্বর ১৯৬৭ ] এবং আরও কবিতা লেখার জন্য প্রস্তত করছি নিজেকে- সেই প্রিয়তম নেতার নিজের হাতে লেখা পত্র জয়নাল হাজারী তার পকেটে নিয়ে ঘুরছেন? ঐ ছোট্ট পত্রটি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন ভিসি ডক্টর এ আর মল্লিক সাহবকে লিখেছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান। জয়নাল হাজারীর কাছে শেখ মুজিবের লেখা ঐ পত্রটি দেখে আমি বিস্মিত বোধ করি এবং জয়নাল হাজারীর মধ্যে আমি এই ভূখন্ডের মুজিবানুসারী একজন তরুণ নেতাকে প্রত্যক্ষ করি। শেখ মুজিব চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি এ আর মল্লিক সাহেবকে অনুরোধ করে লিখেছেন– জয়নাল হাজারীকে ফেনী কলেজ থেকে বিতাড়িত করা হয়েছে আমার ৬ দফা কর্মসূচীকে সমর্থন করার জন্য। আপনি এই ছেলেটিকে কোথাও ভর্তি হওয়ার ব্যবস্থা করে দিন যাতে করে এই ছেলেটি তার পড়াশোনা ও রাজনীতি চালিয়ে যেতে পারে। ইতি– শেখ মুজিবুর রহমান। তারিখটা মনে নেই। |