শনিবার, ২০ এপ্রিল, 2০২4
হাজারীর আত্মজীবনী (পর্ব-৬৪)
Published : Saturday, 25 March, 2017 at 10:24 PM, Update: 06.02.2019 5:42:06 PM

নেত্রীর কাছে আমার বিরুদ্ধে নালিশ
জেলার রাজনীতিতে সরকারি দলের দাপটে বিভীষিকাময় পরিস্থিতি চলছে। একাধিক মামলায় পুলিশ আমাকে খুঁজছে। আর এরই মধ্যে জেলা আওয়ামী লীগের কিছু নেতা জেলা কমিটির বৈঠক ডাকার তাগিত দিলেন। ওই পরিবেশে বৈঠকের সুযোগ না থাকায় সে উদ্যোগ নিলাম না। এ কারণে মালেক মিঞাসহ জেলা কমিটির কজন নেতা একাধিক গোপন বৈঠক করলেন। সর্বশেষ বৈঠকে তারা সিদ্ধান্ত নিলেন সবাই ঢাকায় গিয়ে নেত্রীর কাছে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করবেন। তাদের মূল অভিযোগ আমি জেলা কমিটির সভা ডাকছি না এবং নির্বাচনের জন্য নেত্রীর দেয়া টাকা পয়সার হিসাব দিচ্ছি না। নেত্রীর কাছে যাওয়ার দিনটি আমার কাছে গোপন রাখা হলেও কমিটির সভাপতি কাসেম সাহেব গোপনে আমাকে সব জানালেন। যেদিন জেলা কমিটি নেত্রীর সাথে দেখা করবে, তার আগের দিন হোসেন মেম্বর ও এবি সিদ্দিকসহ একই গাড়িতে ঢাকায় গিয়ে সিদ্দিকের বোনের বাসায় উঠলাম। ১০ টার আগেই সবাই নেত্রীর বাসায় হাজির। আমাকে দেখে তারা বিব্রতবোধ করলেন। সেখানে সবাইকে অত্যন্ত নম্র ভাষায় বললাম, আপনাদের কোনো অভিযোগ থাকলে আগে আমাকে বলুন। আমার উত্তর সন্তোষজনক না হলে নিশ্চয় নেত্রীকে বলতে পারবেন। তারা আমার কথা শুনতে রাজি হলেন না। সবার পক্ষ থেকে হাফিজ বললেন, নেত্রীর কাছে এসেছি নেত্রীকেই বলব। সকাল ১০টায় নেত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের কথা থাকলেও নেত্রী এলেন দুপুর ১২টায়। আলোচনার সূত্রপাত করলেন দাগনভুঁইয়ার মহম্মদ হোসেন সাহেব। কথা বলার চাইতে কাঁদলেন বেশি। তিনি কি যে বললেন, কেউ ঠিক বুঝলেন না। তবে কেঁদে বোঝাতে চাইলেন আমার কার্যকলাপে তারা অতিষ্ট। আমাকে সরাতে হবে। আমার ধারণা ছিল পাঁচ গাছিয়ার সোয়েদ সাহেব সত্য কথা বলবেন। তার বক্তব্য আমার পক্ষে যাবে। তাই আমি বেশি কথা না বলে সৈয়দ সাহেবকে সাক্ষী মানলাম। তিনি যা বললেন সেটা আমার পক্ষে এলো না। নেত্রী আমাকে কথা বলতে বারণ করেছিলেন। তিনি সবার উদ্দেশ্যে প্রশ্ন করলেন, কতোদিন জেলা কমিটির মিটিং হয়নি। রহমান সাহেব উত্তর দিলেন, প্রায় দুমাস। নেত্রী সঙ্গে সঙ্গে বললেন, দুই মাসে আকাশ ভেঙে পড়ল নাকি। ওর বিরুদ্ধে তো হুলিয়া আছে। এবার তাদের অভিযোগ, নির্বাচনের টাকার হিসাব দিচ্ছেন না হাজারী। জবাবে আমি যাদের টাকা দিয়েছিলাম তাদেরকে দেখিয়ে দিলাম। নেতারা চৌদ্দ হাজার টাকা ভাগ করে নিয়েছেন। ছয় হাজার আমার কাছে আছে। পুলিশ এসে যাওয়ায় আর দিতে পারিনি। নেত্রী আমাকে বললেন, চৌদ্দ হাজার দিলেন কিভাবে? আমি তো পাঠিয়েছি ১০ হাজার টাকা। আমি ২০ হাজার টাকা পেয়েছি বলতেই তিনি বললেন, ২০ হাজারের মধ্যে ১০ হাজার টাকা তো আপনার বাড়ি লুটের ক্ষতিপূরণ হিসাবে পাঠিয়েছি। সবার মুখে চুনকালি পড়লো। আসলে ব্যাপারটি আমিও জানতাম না। যে লোকটি টাকাগুলো পৌঁছে দিয়েছেন তিনি ঠিক সেইভাবে আমাকে বলতে পারেননি। তাই এই বিভ্রন্তির সৃষ্টি হয়েছিল। ঘর থেকে বেরিয়ে কয়েকজন দুঃখ প্রকাশ করলেন। সাংবাদিক মাহফুজকে ধরে নিয়ে স্বপন নামে এক ছেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে যাচ্ছিলো। আমি বাধা দিলাম। হাফেজকে ইফতেখাররা মারতে উদ্যোত হলে সে দৌঁড়ে আমার কাছে আসে। আমি ঠেকালাম। সবাই হতাশ হয়ে চলে যাওয়ার পর নেত্রীর সাথে দেখা করলাম। নেত্রী বললেন, সবাইকে নিয়ে কাজ করছেন না কেন। সবারতো আপনার জন্য কাজ করার কথা। তারা নমিনেশনও পাবেন না, পদও পাবেন না। তাদেরকে কাজে লাগলে তো আপনার লাভ। নেত্রীর এ কথা শুনে অভিভূত হলাম। পরবর্তী সময়ে নেত্রীর এই চিন্তা কোথায় গেল জানি না। নেত্রী কামাল হোসেনকে বা তোফায়েল আহম্মদকে তার প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবেন? ওরা তো বঙ্গবন্ধুর পুত্র নয়। সাধারণত কখনো নেত্রীর কাছে কারও বিরুদ্ধে বলতাম না। কিন্তু বিভিন্ন সূত্র ধরে আমাকে দল থেকে বের করে দেয়ার অনেক ষড়যন্ত্র হয়েছে। তবে এসব ষড়যন্ত্র খুব একটা আমলে নিতাম না। নেত্রীও কোনো কোনো সময় বিরক্ত হয়ে অনেকেই বলেছেন, ঠিক আছে, আজই ওকে দল থেকে বের করে দেবো। কিন্তু সেখানে দলের হাল ধরবে কে? অবশ্য কেউ তেমন কোনো লোকের নাম বলতে পারতেন না। ড.কামাল হোসেনের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পর থেকে টাইগার বাহিনী ও পুলিশের ভয়ে বেশ কয়েকদিন পালিয়ে বেড়াতে হয়েছে। ঢাকায় যাওয়া একবারে নিরাপদ ছিল না। চট্টগ্রামের লুতু এবং চাচাতো বোনের বাসাতেই আত্মগোপণ করেছিলাম। খুবই সতর্কভাবে মাঝে মধ্যে বাড়িতে আসতাম। প্রতিরাতেই ঘর বদল করে ঘুমাতে হতো।



সর্বশেষ সংবাদ
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
প্রতিষ্ঠাতা বীর মুক্তিযোদ্ধা জয়নাল হাজারী।   ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: গোলাম কিবরীয়া হাজারী বিটু্।   প্রকাশক: মোঃ ইব্রাহিম পাটোয়ারী।
সহ সম্পাদক- রুবেল হাসান: ০১৮৩২৯৯২৪১২।  বার্তা সম্পাদক : জসীম উদ্দিন : ০১৭২৪১২৭৫১৬।  সার্কুলেশন ম্যানেজার : আরিফ হোসেন জয়, মোবাইল ঃ ০১৮৪০০৯৮৫২১।  রিপোর্টার: ইফাত হোসেন চৌধুরী: ০১৬৭৭১৫০২৮৭।  রিপোর্টার: নাসির উদ্দিন হাজারী পিটু: ০১৯৭৮৭৬৯৭৪৭।  মফস্বল সম্পাদক: রাসেল: মোবা:০১৭১১০৩২২৪৭   প্রকাশক কর্তৃক ফ্ল্যাট নং- এস-১, জেএমসি টাওয়ার, বাড়ি নং-১৮, রোড নং-১৩ (নতুন), সোবহানবাগ, ধানমন্ডি, ঢাকা থেকে প্রকাশিত এবং সিটি প্রেস, ইত্তেফাক ভবন, ১/আর কে মিশন রোড, ঢাকা-১২০৩ থেকে মুদ্রিত।  বার্তা, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ০২-৪১০২০০৬৪।  ই-মেইল : [email protected], web : www.hazarikapratidin.com
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা বা ছবি অনুমতি ছাড়া নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি