শিরোনাম: |
হাজারীর আত্মজীবনী (পর্ব-১০৭)
|
নূরুল আমিন ও এরশাদ ঘুরে দাঁড়াতে পারলে আমি পারব না কেন?
এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেছিলেন, আপনি কি মনে করেন আপনি আবার নেতা হবেন? আগের মতো প্রভাব বলয় সৃষ্টি করতে পারবেন? আমি সেই কথার উত্তরে বলেছিলাম সেই ইচ্ছাটাই আমার নেই। তবে ইচ্ছা থাকলে আগের মতো নেতা হওয়া অসম্ভব কিছু নয়। ইতিহাসে হাজার হাজার নজির আছে যারা হারানো রাজ্য ফিরে পেয়েছিল। আমার মনে হয়, ১৯৫২ সনে ভাষা আন্দোলনের সময় যেতে আমরা কয়েকজন কিছু না বুঝেই বড়দের পিছু পিছু মিছিলে যেতাম। মিছিলে যখন স্লোগান হতো, “নুরুল আমিনের রক্ত চাই, রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই” তখন আওয়াজটা বেড়ে যেত। আমরা পুলক অনুভব করতাম। নুরুল আমিনের বিরুদ্ধে শুধু মানুষ নয় যেন বাংলার আকাশ বাতাস পর্যন্ত ক্ষোভে ফেটে পড়েছিল। নুরুল আমিনবিরোধী স্লোগান দিয়েই ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট মুসলিম লীগ থেকে ক্ষমতা কেড়ে নিয়েছিল। নুরুল আমিনকে প্রকাশ্যে পাওয়া গেলে টুকরো টুকরো করে কুকুরকে খাওয়াতো। এই নুরুল আমিন আইয়ুব আমলে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ময়মনসিংহ থেকে প্রায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় জয় লাভ করেন। শুধু তাই নয় তাকেই জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা করা হয়। বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে বিশেষ অবদান রেখে তিনি যখন করাচি থেকে ফিরে আসলে তেজগাঁও বিমান বন্দরে বঙ্গবন্ধু নিজ হাতে সবার আগে তাকে মাল্যভূষিত করেন। তিনি আমৃত্যু সম্মানিত নেতা হিসেবে বেঁচে ছিলেন। এইতো সেদিন যখন এরশাদের পতন হলো, সেদিন তাকে যদি রংপুরে তার নিজ গ্রামেও পাওয়া যেত তাহলে তাকে কবর দেয়ার জন্য তার শরীরে এক টুকরো মাংস পাওয়া যেত না। অথচ আজ তাকে পাওয়ার জন্য খালেদা জিয়াও হাত বাড়ায়, শেখ হাসিনাও হাত বাড়ায়। সুতরাং দেখা যাচ্ছে রাজনীতিতে শেষ কথা নেই। ১৯৭১ সালে রাজাকার মতিউর রহমান নিজামীরা কি ভেবেছিল তারা মন্ত্রী হবে? জিয়াউর রহমানকে মুক্ত করে কর্নেল তাহের কি ভেবেছিল ফাঁসিতে ঝুলবে? ১৫ বছর পরে মাথায় যাবজ্জীবন সাজা নিয়ে ভারত থেকে দেশে ফিরে কাদের সিদ্দিকী যদি বড় নেতা হতে পারে। আওরঙ্গ যদি ১২ বছর ভারতে কাটিয়ে দেশে দুবার এমপি হতে পারে অন্যরাও পারবে না । নাজিউর রহমান মঞ্জুর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছিল, তারপরেও তাহলে কদিন আগেও যে চারদলীয় জোট ক্ষমতায় ছিল সেই চার দলের মধ্যে একটি দলের প্রধান নেতা ছিলেন তিনি । সুতরাং আমাদের দেশে কখন কার ভাগ্যে কি ঘটবে বলা খুবই মুশকিল। আমাদের দেশে কেন, সারা পৃথিবীতে এই ধরনের ঘটনা নজির আছে। ২৭ বছর ফ্রান্সে পালিয়ে থেকে শাহকে হটিয়ে আয়তুল্লাহ খোমেনী এখন ইরানের ভাগ্যবিধাতা। ৩০ বছর একটানা জেলে কাটিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার নেলসন ম্যান্ডেলা এখন কিংবদন্তির এক মহানায়ক। অন্যর কথাই বা বলি কেন। কেউ কি ভেবেছিল আগরতলা মামলা থেকে বঙ্গবন্ধু মুক্তি পাবে? কে মনে করেছিল ১৯৭১ সালে আটক করে পাকিস্তানিরা তাকে পশ্চিম পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়ার পর তাকে মুক্তি দেবে। মুক্তি পেয়ে জাতির পিতার আসনে বসবেন। অথবা ভারতের জাতির পিতা মহাত্মা গান্ধীর মতো আমাদের জাতির পিতাও ঘাতকের গুলিতে নিহত হবেন। |