শুক্রবার, ২৯ মার্চ, 2০২4
হাজারীর আত্মজীবনী (পর্ব-১২০)
Published : Sunday, 21 May, 2017 at 5:05 PM, Update: 31.03.2019 9:56:14 PM

মাসখানেকের মধ্যে আত্মগোপন থেকে এসে আদালতে হাজির হবো
ফেনীর একসময়ের গডফাদার পলাতক জয়নাল হাজারীকে আওয়ামী লীগ থেকে বহিস্কার করা হয়েছে সোমবার। তার প্রাথমিক সদস্যপদও বাতিল করা হয়েছে। এ ব্যাপারে পলাতক অবস্থার থেকেই জয়নাল হাজারী গতকাল তার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন ফ্যাক্স বার্তায়। এতে তিনি বলেছেন, মাসখানেকের মধ্যেই তিনি বেরিয়ে আসবেন আত্মগোপন থেকে। হাজির হবেন আদালতের দুয়ারে। মানবজমিন-এর কাছে পাঠানো হাজারীর ফ্যাক্স বার্তাটি হুবহু ছাপা হলো এখানে। তিনি বলেছেন-
শুনেছি আমাকে দল থেকে বহিস্কার করা হয়েছে। এটা যদি দলের ভালোর জন্য হয়ে থাকে তাহলে অন্য অনেকের সঙ্গে আমিও খুশি। তবে এ সিদ্ধান্তের কারণে নেত্রী চাপমুক্ত হবেন। আমার একটাই বড় দুঃখ নেত্রী আমার অনুরোধ রাখলেন না। নেত্রীকে আড়াই বছর আগে অনুরোধ করেছিলাম- কোনো কারণে প্রয়োজন হলে আমাকে বলে দিলেই আমি দল থেকে বের হয়ে যাবো। বলেছিলাম কারও ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে আমাকে দল থেকে বহিস্কার করবেন না। আমি দলের জন্য সব সময়ই নিজেকে কোরবান দিতে প্রস্তুত। পঁয়ত্রিশ বছরের কর্মকাণ্ডে এই দলটি আমার রক্ত মাংসে মিশে গেছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আক্রমণের পর থেকেই আমি নিজেকে লাশ মনে করি। একটি লাশকে আক্রমন করা বৃথা। তবু এতদিন কিছু নেতা এই লাশটির হাত-পা বেঁধে রেখে তার সঙ্গে লড়াই করেছেন। এরা এতই অথর্ব যে, লাশটিকে পরাস্ত করতে পারেনি। অবশেষে নেত্রীকে দলভুক্ত করে লাশটিকে পরাস্ত করেছে। শুনেছি সাদ্দামের মূর্তি ভাঙতে ইরাকিরা ভয় পেত। তাই সাদ্দামকে শেষ করার অজুহাত দেয়া হয়েছিল তার কাছে বিধ্বংসী অস্ত্র আছে। কিন্তু সেখানে আজও অস্ত্র পাওয়া গেল না। আমার ধারণা ওর কাছে আসলে অস্ত্র থাকলে কেউ তাকে আক্রমণই করত না। সাদ্দামকে শেষ করার দরকার ছিল, শেষ করা হয়েছে। কারণটা বড় কথা নয়। হাজারীকে শেষ করতে হবে, তাই শেষ করা হলো। তবে আমি মনেকরি সাদ্দাম ভাগ্যবান। আক্রমণকারীরা নিজেদের অস্ত্র রেখে দিয়ে তার ওপর দোষ চাপায়নি। ফলে তার ভাগ্যে যাই ঘটুক ইতিহাস সাক্ষ্য দেবে তার বিরুদ্ধে অভিযোগটি সত্য নয়। মনে হয় আমার কিছুটা ভাগ্য ভালো। এখন পর্যন্ত কেউ বলেনি শেখ হাসিনাকে হত্যা করার জন্য ২১শে আগস্টের বোমা হামলা আমি করেছিলাম। ফাঁসির দড়িটি সাদ্দামের গলায় লাগানোই আছে। তবু সে মাথা নত করছে না। আমিও মাথা নত করতে চাই না। যুদ্ধের সময় আমি যদি ভুট্টোকে হাতের সামনে পেতাম, তবে মনে হয় নিজের হাতেই খুন করতাম। কিন্তু জিয়াউল হক যখন তাকে ফাঁসি দেয় তখন সে তার পরিবারকে চিঠি লিখেছিল কেউ যেন ক্ষমা ভিক্ষা না করে। এ ঘটনার পর ভুট্টোকে হাতের কাছে পেলে তার পায়ে ধরে সালাম করতাম।
গফফার চৌধুরী একবার জনকণ্ঠে লিখেছিলেন, সাদ্দামের সঙ্গে হাজারীর অনেক মিল। একজন রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের শিকার, অন্যজন আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসের শিকার। আমি তখন গাফফার ভাইকে বলেছিলাম ‘ক্ষুদ্রতম ব্যক্তিকে বিশাল এক কিংবদন্তির সঙ্গে তুলনা করে ভুল করেছেন। ‘একদিন যে নেত্রী নির্বাচনের আগে লাখো জনতার সঙ্গে ঘোষণা করেছিলেন- হাজারী আছে , হাজারী থাকবে, ওর নির্বাচনের সব দায়িত্ব আমি নিলাম। সেই নেত্রী কোন পরিস্থিতিতে এই কঠোর সিদ্ধান্ত নিলেন- তাতে তো চিন্তার বিষয় আছেই। তবে এই সিদ্ধান্তের পরে সারাদেশে নেতাকর্মীদের কাছে একটি ভুল বার্তা চলে যাবে। তা হচ্ছে সুদিনের নেতারা কাউকে কিছু করে না। বিপদের দিনে পাশে না থেকে উল্টো ক্ষতি করতে চায়। দলটি রক্তের সঙ্গে মিশে গেছে বলে বলছি দলটির মধ্যে দূরদর্শী লোকের বড়ই অভাব। ৩০শে এপ্রিলের ঘোষণা যে দলের কতবড় ক্ষতি করেছে তা কেন কেউ বুঝল না? আমি এখনো তা ভেবে পাই না। এই ঘোষণার কদিন পরই অনেকগুলো পৌর নির্বাচন হয়। সেই নির্বাচনে আমাদের চরম ভরাডুবি হয়। আমি যদি বলি ওই ঘোষণার জন্যই আমরা সেদিন পরাস্ত হয়েছিলাম তা কি অস্বীকার করা যাবে? ফেনীর পরাজয়ে যদি আমাকে বহিস্কার করা হয়, ওই সব পৌরসভার পরাজয়ের জন্য ওই ব্যক্তিকে বহিস্কার করা হবে না কেন? আমাকে অল্প কদিন পরেও বহিস্কার করা যেত। আমার ঘরের কাছে যখন চট্টগ্রামের মেয়র নির্বাচন হচ্ছে ঠিক তার পূর্ব মুহূর্তে এ ঘটনা মেয়র নির্বাচনকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। এই নির্বাচনের যদি চৌধুরী পরজিত হয় আর কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার কারও কোনো সুযোগ নাই। যে ব্যক্তি গত নির্বাচনে আমার সঙ্গে প্রার্থী হয়ে আমার পরাজয় নিশ্চিত করেছে, যে ব্যক্তি ভিপি জয়নালের মাকে মা ডেকেছে, যার আপন ভাই ফেনীর একটি ইউনিয়নের বিএনপি সভাপতি সেই ব্যক্তিকে কোনো শাস্তি না দিয়ে আমার জায়গায় বসানোর চেষ্টা হচ্ছে। তার একমাত্র যোগ্যতা আমাদের এক নেতার ব্যবসায় পার্টনার। আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ সবই নাটক। পাগলা মিয়া তার পবিত্র মাটিতে কখনোই কারও পাগলামি সহ্য করেন না, নিশ্চয় এটাও করবে না। অতি অল্প সময়েই সবাই এটা টের পাবেন। সবার প্রতি অনুরোধ, এই ঘটনার পর দয়া করে আমাকে কাদের সিদ্দিকী ও আওরঙ্গের সঙ্গে তুলনা করবেন না। কেননা দল থেকে বের হয়ে গেলেও তারা শুধুমাত্র নিজের যোগ্যতায় এমপি হতে পেরেছেন এবং পারবেন। আমার পক্ষে তা সম্ভব না। আমি দলের বাইরে গিয়ে একটি ওয়ার্ডের মেম্বারও হতে পারব না। তাই আমাকে দল থেকে বের করে দিয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিলেও ওদের বের করে দিয়ে সঠিক সিদ্ধান্তটি নেননি। এতো সব কিছুর পরও শুধু বলতে চাই অন্তত আমার জীবদ্দশায় মুজিব উদ্যান কোনোদিন জিয়া উদ্যান হবে না। বলা হচ্ছে আমি ইঙ্গিত দিয়ে বিএনপি প্রার্থীকে জিতিয়ে দিয়েছি। এটা তো অলৌকিক শক্তি ছাড়া সম্ভব নয়। যে ব্যক্তি প্রকাশ্যে আসতে পারে না, যাকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার আগেই শেষ করে দিয়েছে সেই ব্যক্তির ইচ্ছায় ফেনীর পৌরসভায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হবে তা কি করে ভাবা যায়? তাই যদি হতো হেরে গেলাম কেন।
উল্লেখ্য, বলতে চাই বিগত নির্বাচনে যেসব কেন্দ্রে আমি জিতেছিলাম সেই সব কেন্দ্রই শুধু আমাদের প্রার্থী বিপুল ভোটে জয়লাভ করেছে। এসব কথা বাদ দিলাম। বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর আপন ভাই ভোটের আগের দিন প্রশাসনকে ডেকে বলেন, এটা প্রধানমন্ত্রীর জেলা। এই নির্বাচন তার উজ্জতের নির্বাচন। সুতরাং তার ইজ্জত গেলে কারও ইজ্জত থাকবে না। এই পরিবেশে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে টক্কর দেওয়া আমার পক্ষে কি সম্ভব? সবাই মিলে কি ঢাকায় ফালুকে ঠেকাতে পেরেছিলেন? হ্যা, ৯১-তে পেরেছিলাম। কারণ তখন আমি লাশ নই বরং জনপ্রিয় এমপি ছিলাম। আমার শাস্তিটা তো আমি মাথা পেতে নিয়েছি। প্রশ্ন রাখব আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী জিতবে তো? জিততেই হবে নইলে কারও রক্ষা নেই। গত নির্বাচনে শুধু আমি নই, আমার হাতে গড়া দশ হাজার কর্মীর আত্মীয়-স্বজন কেন্দ্রের কাছেই যেতে পারেনি। কোনো কেন্দ্রে আমার এজেন্ট ছিল না। তবু আমি সত্তর হাজার ভোট পেয়েছিলাম। ডিসি সুলেমান সব সময় বলেন, ভিপি জয়নাল এমপি হয়নি। আমি ওকে বানিয়েছি। আমার চারপাশে যেসব প্রভাবশালী নেতারা নির্বাচন করেছিলেন প্রকাশ্যে থেকে তাদের সবার সম্মিলিত ভোটের চেয়েও আমার ভোট ছিল বেশি। আমি এই মুহূর্তে খুব হতাশ নই। কেননা জীবনের অনেক উত্থান-পতন হয়েছে। এ ব্যাপারে আমার ভালো হলো কি খারাপ হলো এখনই বলা যাবে না। জাফর ইমাম যখন আমাকে ফাঁসি দিতে চেয়েছিল এবং পুলিশ আমাকে ধরে নিয়ে যায়- সকলে ভেবেছিল সব শেষ। আসলে এটাই ছিল আমার উত্থানের প্রথম সোপান। ব্রিটিশ, জার্মান ও ইতালির পার্লামেন্টে আমার মুক্তির দাবি করে প্রস্তাব এসে প্রতিবাদ করেছিল। ব্রিটিশ এমপিরা হিথ্রো বিমানবন্দরে এরশাদকে ঘেরাও করেছিল। আমার মুক্তির দাবিতে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সংসদ ৭ দিন অবরুদ্ধ করে রেখেছিল। মুক্তি পেয়েই সংসদে ৩০ মিনিট একটি ঐতিহাসিক ভাষণ দিয়েছিলাম। সেই নেত্রীর সম্মতিতে দল থেকে বের হতে হলো নিশ্চয়ই লজ্জার ব্যাপার। আজ কেবলই মনে পড়ছে যেদিন বাকশাল কর্মীরা আক্রমণ করেছিলেন, সেদিনই শেখ হাসিনা হয়তো মারা যেতেন। কিন্তু কেবলমাত্র আমি আমার কর্মীদের প্রতিরোধের মুখে বাকশাল কর্মীরা পিছু হটে যায়। অন্যদের মতো যদি আমি পালিয়ে যেতাম তবে পুরা অফিসটাই ওদের দখলে চলে যেত। শেখ হাসিনা সেখানে আটকা ছিলেন। বড় বড় ইটের টুকরা তার গায়ের কাছে এসে পড়ছিল। অন্যদিকে জাফর ইমামের লেলিয়ে দেওয়া খুনি বাহিনী আমাকে খুন করার জন্য সারাদেশে চষে বেড়াচ্ছিল। তখন শেখ হাসিনাই আমার প্রাণ বাঁচিয়েছিলেন। এসব কথা দলে ফিরে যাওয়ার জন্য বলছি না। কিছু লোকের অবগতির জন্য এগুলো বলা দরকার। আমার মনে হয় এখনও কেউ কেউ ভয় পাবে এই ভেবে যে, আমি হয়তো দলে ফিরে যাবো। বলি ভয়ের কোনো কারণ নাই। একদিন ছাত্রজীবনে বঙ্গবন্ধুর হাত ধরে এই দলে ঢুকেছিলাম। বঙ্গবন্ধু খুব স্নেহ করতেন। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের পরপর জেলা রাজনীতির দ্বন্দ্বে জেলে পাঠিয়েছিলেন। মাত্র ছয় মাসের মাথায় বের করে এনে মাথায় হাত বুলিয়ে বলেছিলেন ভুল হয়েছে। ওদের আমি ছাড়বোন না। তোফায়েল ভাই এই ঘটনার সাক্ষী। পরে বাকশালেরও সম্পাদক করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু মৃত্যুরপর ষড়যন্ত্রকারীরা সবাই সরে গেল কিন্তু আমি রয়ে গেলাম। প্রথমেই একটানা চার বছর জেল খাটলাম। এখন তাই আমার মনে হচ্ছে বিগত দিনে যারা থাকবে তারাই নেত্রীকে বিভ্রান্ত করে দেবে। কোনোদিন যদি পরীক্ষা হয় সেদিন আবার প্রমাণ হবে কারা আসল নকল। আমার মনে আছে এই প্রজন্মের জনপ্রিয় কবি নির্মলেন্দু গুণকে আমি বঙ্গবন্ধুর কাছে প্রথম নিয়ে যাই। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আমার গভীর হৃদ্যতা দেখে কবি তার স্মৃতিকথায় লিখেছিল ‘জাতির শীর্ষ নেতা মফস্বলের একজন ছাত্র নেতাকে এত গুরুত্ব দিল কেন? লিখলেন, পরে বুঝেছিলাম জহুরী জহুর চেনে। কিন্তু সে জহুর এখন ভাঙা পাথর। তাই তারই কন্যা ছুড়ে ফেলে দিয়েছেন। বঙ্গবন্ধু জেলে দিয়েছিলেন মাথা নত করে মেনেছিলেন। রবদের মতো বিদ্রোহ করিনি। আবার বঙ্গবন্ধুই সম্পাদক করেছিলেন তাও সানন্দে গ্রহণ করেছি। মনে হয় শেখ হাসিনা আর কোনোদিন ডাকবেন না। ডাক দিলেও মনে হয় যাওয়ার সুযোগ পাব না। কেননা শরীরটা খুব খারাপ যাচ্ছে। এখন হয়তো আরও খারাপ হবে। শুনেছি একমাসের জেলা সম্মেলন হবে। আমাকে ঠেকানোর সব প্রক্রিয়া ব্যর্থ হওয়ার পরে এই আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত হলো বলে সচেতন কর্মীরা মনে করে। নেত্রীর রক্তের সম্পর্কের কাছেরও আত্মীয়রা ব্যতীত নেত্রীর অতি নিকটতম হালের নেতারা সবাই আমার বিরুদ্ধে। ধারণা ছিল নেত্রীকে কেউ টলাতে পারবে না। আমারই ভুল হলো তাই ওদের জয় হলো। ওরা ওদের জয়ে থাক পরাজয়ের প্রতিশোধ নিয়ে আর খেলতে চাই না। কিন্তু ওদের এই বিজয় ওদের গলার কাঁটা হবে কিনা সেটা এখন থেকে ভাবতে হবে। কেউ যদি তার ঘরে আশ্রয় দিতে না চায় জোর করে সেই ঘরে থাকা কঠিন। যে ঘরে বঙ্গবন্ধুর হাত ধরে ঢুকেছিলাম, বঙ্গবন্ধুর সেই কন্যাই যদি সেই ঘর থেকে বের করে দেয়, সেখানে থাকার চেষ্টা করা বৃথা। বাঁচার জন্য একঘরে আশ্রয় না পেলে সবাই অন্য ঘরে ঢুকতেই চায়। কিন্তু শেষ বয়সে ঐতিহ্য নষ্ট করে অন্য ঘরে যেতে চাই না। পথেই কাটিয়ে দেব। এখন আমার পরিকল্পনা হচ্ছে মাসখানেকের মধ্যে আত্মগোপন থেকে উঠে এসে আদালতের দুয়ারে হাজির হবো। জানি জামিন হবে না। সুতরাং জেলেই ঘর করে নেব। সেখানে ঠিকমতো ওষুধ না পেলে তো ছয় মাসের মধ্যে দুনিয়া থেকে মুক্তি পেয়ে যাব। জেল থেকে লাশটি বেরুলে দেশেই কবর হবে এটাই আনন্দ। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আইনত রাষ্ট্রীয় সম্মানটি ভাগ্যক্রমে যদি পেয়ে যাই তাহলে জনম সার্থক মানবো। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি এভাবেই ধ্বংস হবে। মৌলবাদীদের কিছু করতে হবে না। এই মুহূর্তে নেত্রীর উদ্দেশ্য বলতে চাই, আমার জানা মতে, আপনার কোনো নির্দেশ আমি অমান্য করিনি। এখন তো আর নির্দেশ মানা না-মানার প্রশ্ন রইল না। এখন বিচ্ছেদের সময় দয়া করে কোনো কটুক্তি বা কঠিন মন্তব্য করবেন না। আমি জীবনে কোনোদিন দলীয় কোনো নেতাকর্মীর ব্যাপারে বঙ্গবন্ধু বা নেত্রীর কাছে নালিশ করিনি। তবে পরজগতে যদি দেখা হয় একটি নালিশ করব। বলব আপনি হাত ধরে যে ঘরে আমাকে আশ্রয় দিয়েছিলেন। আপনার কন্যা সে ঘর থেকে আমাকে বের করে দিয়েছে। বিচার করুন। এখন যদি কেউ প্রশ্ন করেন, এবার কি করবেন- উত্তরে বলব যারা বলেন, রাজনীতিতে শেষ কথা নেই , তাদের বলব রাজনীতিতে সব কথা আছে। আর প্রমাণ করে যাব, আল্লাহ যা করে ভালোর জন্যই করে। সাংবাদিক বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলা ছাড়া জেলে ঢুকব না। মনে হচ্ছে সুভাষ বোসের মতো আমাকে নিয়ে মৃত্যুর পরেও মানুষের কৌতুহল থাকবে। ক্ষতি কী? আমার কাছে তো ভালোই মনে হয়। পত্রিকায় কল্পকাহিনী ছাপা নিয়ে নেত্রীকে কতবার রস করতে দেখেছি। এখন পত্রিকায় খবর ছাপা হলে তদন্ত ছাড়াই তার ওপর ভিক্তি করে ব্যবস্থা নেওয়া হলো। যা হয়ে গেছে সেতো আর ফিরিয়ে নেওয়া যাবে না। তবে কার মাধ্যমে শত্রুতা নেত্রীকে বশ করলেন এবং আরও কিছু তথ্য দিয়ে সাংবাদিকদের খুশি করব। আগে পত্রিকার কোনো খবর বিশ্বাস করতেন না, এখন বিএনপি প্রার্থীকে সমর্থন করেছি এই খবর বেদবাক্য হয়ে গেল কেন ভাবতে হবে। এই সেদিনও তো জাতীয় পত্রিকায় বড় বড় করে ছাপা হলো তসলিমাকে বিয়ে করছি। খবরটির কোনো ভিক্তি ছিল কী? এভাবেই তো খবর হচ্ছে। খোঁজ নিতে হবে কোনটি সঠিক কোনটা মিথ্যা। আমরা ক্ষমতায় থাকলে বিএনপি প্রার্থীও দেয়নি। এখন বিএনপি ক্ষমতায় থাকলে আলু-কলার মতো ওটা নিয়ে নেব কী করে হয়। ওদের সিদ্ধান্তই ছিল ঝামেলার বাড়িতে যাওয়ার দরকার নেই। প্রিজাইডিং অফিসার ঘোষণা দিয়ে দেবে ভোট-টোট যা হয় হোক। তারা জানতো এই মুহূর্তে আমাদের প্রতিরোধ করার কোনো ক্ষমতা নেই। খুব সহসা দেশবাসীকে হয়তো শেষবারের মতো অনেক কথা বলে যাবো। তখন কেন ঘটনাটি ঘটেছে সবার কাছেই তা পরিষ্কার হবে। বিগত বছরগুলোতে আমাকে নিয়ে দেশের জাতীয় পত্র-পত্রিকায় ব্যাপক লেখালেখি হয়েছে। তার মধ্যে বেশির ভাগই ছিল ভিক্তিহীন ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত। এসব অভিযোগ খণ্ডন করে অনেক পরিশ্রম করে একটি বই লিখেছি। এই মুহূর্তে আমার ঐকান্তিক ইচ্ছে দেশবাসীর হাতে বইটি পৌঁছে দেওয়া। এটাই এখন আমার প্রধান চাওয়া-পাওয়া। বইটি যদি সঠিকভাবে প্রকাশ করে যেতে না পারি তাহলে বড়ই দুঃখ থেকে যাবে জীবনে। তবে তথ্য প্রযুক্তির এই উৎকর্ষের যুগে আশা করি আমার বাসনাও অপূর্ণ থাকবে না। বই আকারে সরাসরি যদি এটি সরবরাহ করতে না পারি তবে কমপক্ষে তিনটি দেশের ওয়েবসাইট থেকে মানুষের কাছে পৌঁছে দেব।
আরও অনেক কথা থাকলেও এখন আর কাউকে বিরক্ত করতে চাই না। আমার ব্যাপারে অনেক খবরই তো পরিবেশন করছেন। আজ বড় দুর্দিনে শুধু অনুরোধ করি আমার অনুভূতি সম্বল করে লেখা এই প্রতিবেদনটি গুরুত্ব সহকারে ছাপাবেন। আমার বিশ্বাস পাঠকরা অতীতের মতোই এটাকে লুফে নেবে। সবশেষে কবির কথায় বলি-

‘জাগবার দিন আজ দুর্দিন চুপিচুপি আসছে
যাদের চোখেতে আজও স্বপ্নের ছায়াছবি ভাসছে
তাদের যে দুর্দিন পরিণামে আরও বেশি জানবে।
চেতনা থাকলে আজ দুর্দিন আশ্রয় পেতো না
আজকে রঙিন খেলা নিষ্ঠুর হাতে করো অর্জন।’



সর্বশেষ সংবাদ
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
প্রতিষ্ঠাতা বীর মুক্তিযোদ্ধা জয়নাল হাজারী।   ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: গোলাম কিবরীয়া হাজারী বিটু্।   প্রকাশক: মোঃ ইব্রাহিম পাটোয়ারী।
সহ সম্পাদক- রুবেল হাসান: ০১৮৩২৯৯২৪১২।  বার্তা সম্পাদক : জসীম উদ্দিন : ০১৭২৪১২৭৫১৬।  সার্কুলেশন ম্যানেজার : আরিফ হোসেন জয়, মোবাইল ঃ ০১৮৪০০৯৮৫২১।  রিপোর্টার: ইফাত হোসেন চৌধুরী: ০১৬৭৭১৫০২৮৭।  রিপোর্টার: নাসির উদ্দিন হাজারী পিটু: ০১৯৭৮৭৬৯৭৪৭।  মফস্বল সম্পাদক: রাসেল: মোবা:০১৭১১০৩২২৪৭   প্রকাশক কর্তৃক ফ্ল্যাট নং- এস-১, জেএমসি টাওয়ার, বাড়ি নং-১৮, রোড নং-১৩ (নতুন), সোবহানবাগ, ধানমন্ডি, ঢাকা থেকে প্রকাশিত এবং সিটি প্রেস, ইত্তেফাক ভবন, ১/আর কে মিশন রোড, ঢাকা-১২০৩ থেকে মুদ্রিত।  বার্তা, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ০২-৪১০২০০৬৪।  ই-মেইল : [email protected], web : www.hazarikapratidin.com
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা বা ছবি অনুমতি ছাড়া নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি