শিরোনাম: |
কোথায় শৈত্যপ্রবাহ, কোথায় ঝড়ঝঞ্জা?
|
জয়নাল হাজারী ॥
প্রায় মাস খানেক আগে আমাদের আবহাওয়া দপ্তর পূর্বাভাস দিয়ে বলেছিল আগামী দুই একদিনের মধ্যেই সারাদেশে সত্যপ্রবাহ বয়ে যাবে। পরপরই ঝড়ঝঞ্জায় নাকাল হবে সারাদেশ। দুই-একদিন পার হয়ে মাস গড়িয়ে গেল শৈত্যপ্রবাহের দেখা নেই,ঝড়ঝঞ্জার কোন লক্ষণ নেই। বারবার আমাদের আবহাওয়া দপ্তর এই ধরনের ভুল তথ্যসম্ভলিত পূর্বাভাস দেয় কেন এটা একটি চিন্তার বিষয়। আধুনিক যন্ত্রপাতি না থাকলে তা আনার ব্যবস্থা করতে হবে নতুবা অনুহুত বিভ্রান্তিমূলক তথ্য দেয়া বন্ধ করতে হবে । পৃথিবীর অন্যকোন দেশে এইরূপ ভুল পূর্বাভাস দেয় বলে আমার জানা নেই। বলা হয় সারাদিন বৃষ্টি হবে কিন্তু সেদিনই দিব্বি ক্রিকেট ম্যাচ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। প্রায়ঃস পূর্বাভাস দিয়ে বলা হয় সাত নম্বর বা দশ নম্বর সতর্কবাণী পরে বলা হয় উড়িষ্যার দিকে চলে গেছে। মাঝে মধ্যে ভারতের পূর্বাভাস লক্ষ্য করে এখানে পূর্বাভাস দেয়া হয়। সেগুলো অনেকটাই ঠিক হয়। এই সমস্যাটি দূর হচ্ছে না কেন আমাদের বোধগম্য নয়, তবে এতে দেশের সাধারণ মানুষ খুবই বিরক্ত হয়। কেন এরকম বিভ্রান্তি হয় এর কোন উত্তরও আবহাওয়া দপ্তর দেয়ার প্রয়োজন মনে করে না। তবে এটি নিঃসন্দেহে দুঃখজনক। অনতিবিলম্বে এর একটি সুরাহা হওয়া প্রয়োজন। দেশজুড়ে ঘন কুয়াশা। ব্যাহত হচ্ছে মহাসড়কে যানচলাচলের স্বাভাবিক অবস্থা। দুর্ঘটনা এড়াতে নৌ-পথেও রাতের বেলা বন্ধ রাখা হচ্ছে সব ধরনের নৌযান চলাচল। পৌষের এই সময় দেশজুড়ে শীতের প্রকোপ থাকার কথা থাকলেও নেই তার দেখা। তবে গত দুদিন ধরে বেড়েছে শীতের অনুভূতি। হঠাৎ করেই দেশের উত্তর পশ্চিমাঞ্চলের কয়েকটি জেলায় অব্যাহতভাবে কমেছে দিন-রাত্রির তাপমাত্রা। আবহাওয়া অফিসও খবর দিচ্ছে চলতি সপ্তাহের মধ্যেই একটি শৈত্য প্রবাহের। বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়া বিজ্ঞানী ড. আব্দুল মান্নান বলেন, উপমহাদেশীয় উচ্চ চাপ বলয়ের কারণেই মূলত শীত নামে বাংলাদেশে। সুদূর সাইবেরিয়া থেকে উচ্চ চাপ বলয় হিমালয় পেরিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। বাংলাদেশের আগে শৈত্য প্রবাহ শুরু হয় ভারতে। কিন্তু এখনও ভারতীয় উপমহাদেশ অংশে শৈত্য প্রবাহের ‘সেটআপ’ হয়নি। যে কারণে বাংলাদেশে শৈত্য প্রবাহ শুরু হয়নি। তবে গত দুদিন ধরে ঘন কুয়াশাসহ সারা দেশেই শীতের অনুভূতি বেড়েছে। এটা আগামী দুদিনের মধ্যে কমার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছেনা। বরং ধারণা করা হচ্ছে আগামী ১২ বা ১৩ই জানুয়ারি থেকে শৈত্য প্রবাহ শুরু হতে পারে। তবে এই শৈত্য প্রবাহ নির্ভর করছে ভারতের অংশে উচ্চ চাপ বলয়ে শৈত্য প্রবাহের সেটআপ হওয়ার ওপর। এর আগে আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে জানানো হয়েছিল, সর্বোচ্চ তাপমাত্রা এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রার মধ্যে বড় ধরনের ফারাক থাকায় রাজধানীতে শীতের প্রকোপ কম অনুভূত হচ্ছে। মূলত পশ্চিমা লঘুচাপের কারণেই এমনটি হচ্ছে। ২৭শে ডিসেম্বরের পরে এই ব্যবধান কমে আসবে। তখন শীতের প্রকোপ বেড়ে যাবে। তবে শীতের এই প্রকোপ বাড়তে আরও কয়েক দিন সময় নিয়ে ৫ই জানুয়ারি থেকে সারা দেশে শীতের অনুভূতি স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বেড়েছে। গতকাল তেতুলিয়ায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে মাত্র ৮ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দেশের উত্তরাঞ্চল রংপুর থেকে শুরু উত্তর পশ্চিমাঞ্চলের সবগুলো জেলা হয়ে যশোর পর্যন্ত সর্বনিম্ন তাপমাত্রাও ১০ থেকে শুরু করে ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ছিল গত দুদিন। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণেই মূলত আবহাওয়া বৈচিত্র্যহীন হয়ে পড়ছে শীতকালে। ঋতু বৈচিত্র্যের ধরন অনুযায়ী প্রতিবছর প্রকৃতিতে শীত আসলেও তার ধারাবাহিকতা থাকছে না। কোন বছর কনকনে ঠাণ্ডায় মানুষজন যেমন জবুথবু হয়ে পড়ছে আবার কোন বছর প্রকৃতিতে শীত ঋতু চলছে তা বোঝাই মুসকিল হয়ে পড়ছে। আবহাওয়া অফিসের হিসাব অনুযায়ী প্রতি বছর ডিসেম্বরের ১৫ তারিখ থেকে জানুয়ারির ১৫ তারিখ পর্যন্ত শীতের আধিক্য থাকে প্রকৃতিতে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে আবহাওয়া বিশেষ কোন নিয়মকানুন অনুযায়ী চলছে না। এ কারণেই শীতও তার রুটিন মতো আচরণ করছে না। শুধু বাংলাদেশেই নয়, সারাবিশ্বেই আবহাওয়া তার রুটিন মেনে চলছে না। মেরু অঞ্চলে বরফের স্তর ক্রমেই কমছে। আবহাওয়ার এ পরিবর্তনের জন্য জনসংখ্যার বৃদ্ধি, নগরায়ন, বায়ুদূষণ, কলকারখানার দূষণ, অতিরিক্ত কার্বন নির্গমনসহ আরও বহুবিধ কারণ রয়েছে। বহুতল ভবন ও কলকারখানার সংখ্যা বৃদ্ধির কারণে উষ্ণতা বাড়াচ্ছে। যার প্রভাব শহর অঞ্চলে বেশি পড়ছে। এদিকে গতকাল শনিবার ঢাকায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৪ ডিগ্রি ও সর্বচ্চো তাপমাত্রা ২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। ময়মনসিংহে সর্বনিম্ন ১২ দশমিক ৬ ডিগ্রি ও সর্বোচ্চ ২৪ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। রাজশাহীতে সর্বনিম্ন ১২ দশমিক ১ ডিগ্রি ও সর্বোচ্চ ২৩ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। রংপুরে সর্বনিম্ন ১১ দশমিক ৫ ডিগ্রি এবং সর্বোচ্চ ২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। খুলনায় ১৩ দশমিক ৫ ডিগ্রি ও সর্বোচ্চ ২৫ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বরিশালে সর্বনিম্ন ১৩ দশমিক ৮ ডিগ্রি এবং সর্বোচ্চ ২৫ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। চট্টগ্রামে সর্বনিম্ন ১৫ দশমিক ৬ ডিগ্রি ও সর্বোচ্চ ২৬ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সিলেটে সর্বনিম্ন ১৫ ডিগ্রি ও সর্বোচ্চ ২৭ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিশেষজ্ঞ কমিটির দীর্ঘমেয়াদি আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, দেশের অধিকাংশ এলাকায় মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা রয়েছে। এর কারণে সারা দেশের রাতের তাপমাত্রা কমার সঙ্গে সঙ্গে দিনের তাপমাত্রাও ২০ ডিগ্রির কাছাকাছি থাকছে। গত কয়েক দিন থেকে উত্তরাঞ্চলে কনকনে শীত বিরাজ করছে। এটি দ্রুত পরিবর্তন হয়ে মাসের মাঝামাঝি সময়ে শৈত্য প্রবাহে রূপ নিতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। |