শুক্রবার, ২৯ মার্চ, 2০২4
আসামের মুসলিমরা তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত
Published : Tuesday, 16 July, 2019 at 8:11 PM

আন্তর্জাতিক ডেস্ক ॥
অনুপ্রবেশকারী আখ্যায়িত হওয়া এবং নাগরিকত্ব নিয়ে বিচারিক প্রক্রিয়ার দুর্ভোগের কারণে ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কার কথা জানিয়েছেন ভারতের আসাম রাজ্যের মুসলিম জনগোষ্ঠীর মানুষরা। বিজেপি বাদে ভারতের অন্য দলগুলো বলছে, শঙ্কায় ভোগা এসব মুসলিম নাগরিকের মধ্যে প্রায় অর্ধশত আত্মহত্যা করেছেন। আজ থেকে সত্তর বছর আগে ভারতে জন্ম নিলেও বিচারিক প্রক্রিয়ায় গিয়ে তিন বছর আটক ছিলেন রেহাত আলী। বিজেপি সরকারের মুসলিম-বিরোধী নীতির কারণে কয়েক লাখ মুসলমানের মতো এখন ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কায় এই নিরক্ষর কৃষক। ফ্রান্সভিত্তিক বার্তা সংস্থা এএফপিকে রেহাত আলী বলেন, ‘আমি কখনও কল্পনাও করিনি যে আমার নাগরিকত্বের প্রমাণ দিতে হবে। আমি ভারতের নাগরিক। আসামে জন্ম নিয়েছি এবং কয়েক পুরুষ ধরে এখানেই বসবাস করছি।’ গ্রামীণ এই কৃষক ‘বিদেশি শনাক্তকরণ ট্রাইব্যুনালে’ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দিতে না পারায় তাকে বাংলাদেশি ঘোষণা করে আটক কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছিল। উচ্চ আদালতের রায়ে তিন বছর পর ছাড়া পান তিনি। আটক কেন্দ্র থেকে ছাড়া পেলেও আইনি লড়াই করতে গিয়ে ইতোমধ্যে তাকে বিক্রি করতে হয়েছে সমস্ত ফসলী জমি এবং গবাদিপশু। এরপরও অন্যদের তুলনায় নিজেকে ভাগ্যবান মানছেন তিনি। কেননা অনেকে সেটাও করতে পারেননি। আসামে গত বছরের ‘দ্য ন্যাশনাল রেজিস্টার অব সিটিজেনস’ বা এনআরসি নামক খসড়া আইনের কারণে প্রায় ৪০ লাখ আসামবাসীর ভাগ্য ঝুলছে। কারণ ১৯৭১ সালের আগে বাবা কিংবা দাদার প্রজন্ম আসামে ছিল, এমন প্রমাণ দিতে পারেনি তারা। বিদেশি শনাক্তকরণ ট্রাইব্যুনালে যারা বাদ পড়বে, তারা আপিল করতে পারবেন। কিন্তু চলতি মাসের শেষ নাগাদ পর্যন্ত চলা শনাক্তকরণ প্রক্রিয়া চললেও প্রায় ২০ লাখ মানুষ এর বাইরে থেকে যেতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। কারণ বেশিরভাগ নিরক্ষর মানুষের জন্য ট্রাইব্যুনালের প্রক্রিয়া বুঝা এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দেওয়া যেন দুঃস্বপ্নের মতো। শনাক্তকরণ ট্রাইব্যুনালে ভারতীয় সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন সোনা উল্লাহর নাগরিকত্ব প্রমাণ না হওয়ার বিষয়টি ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দিয়েছিল। ১৯৯৯ সালে পাকিস্তানের সঙ্গে কারগিল যুদ্ধেও অংশ নিয়েছিলেন তিনি। কাগজপত্রে অমিল থাকার কারণে গত মে মাসে তাকে আটক কেন্দ্রে পাঠানো হয়।
এমনকি পুলিশ তার পুরানা ইউনিফর্মও জব্দ করেছিল। অবশ্য ব্যাপক প্রতিবাদের পর অন্তর্র্বতী জামিন পেয়েছেন তিনি। তাকে নাগরিকত্ব পেতে আইনি লড়াই করতে হচ্ছে।
নাগরিকত্ব জটিলতা নিরসনে আসামে ১০০টি বিদেশি শনাক্তকরণ ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম চলছে। এ ছাড়া আরও ২০০টি ট্রাইব্যুনাল স্থাপন করা হচ্ছে। কর্মকর্তারা অযোগ্য হওয়ায় এসব ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম অনেকটা লটারির মতো বলে অভিযোগ করছেন অধিকারকর্মীরা।
অনলাইন ম্যাগাজিন স্ক্রল জানিয়েছে, বিদেশি ঘোষণার ক্ষেত্রে সংখ্যার বিচারে ট্রাইব্যুনালের কর্মকর্তাদের হরহামেশায় সরিয়ে দেয় বিজেপি নেতৃত্বাধীন রাজ্য সরকার।
সাবেক একজন ট্রাইব্যুনাল সদস্য ক্রিকেটের পরিভাষা ব্যবহার করে বলেন, ‘পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে, ট্রাইব্যুনালের যে সদস্য অধিক ব্যক্তিকে বিদেশি ঘোষণা করতে পারেন, তাকে সবচেয়ে বেশি উইকেট-শিকারি বলা হয়ে থাকে।’
এ ছাড়া আরেকটি বিষয় বেশ উল্লেখ করার মতো। খসড়া এনআরসিতে যারা বাদ পড়েছেন তাদের বেশিরভাগই মুসলিম। কারণ এই সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে কাজে লাগানোর জন্য নরেন্দ্র মোদির সরকার এটি চালু করেছে বলে অভিযোগ। গত জানুয়ারিতে নাগরিকত্ব নিয়ে একটি আইন পাস করে ভারতীয় সংসদের নিম্নকক্ষ লোকসভা। যাতে বলা হয়, ছয় বছর আগে যারা বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে ভারতে এসেছেন তাদেরকে নাগরিকত্ব দেয়া হবে। তবে মুসলিমরা বাদে।
আসামের ছয়টি আটক কেন্দ্রে বর্তমানে ৯৩৮ জন বন্দী আছেন। তিন হাজার মানুষের জন্য আরেকটি কেন্দ্র নির্মাণ করছে মোদি সরকার। পাশাপাশি প্রতিটিতে এক হাজার লোকের ধারণক্ষমতাসম্পন্ন নয়টি কেন্দ্র নির্মাণ করার পরিকল্পনা নিয়েছে তারা।
অনিশ্চয়তায় দিনাতিপাত করতে হচ্ছে আসামের মুসলমানদের। তাদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতাও দেখা দিয়েছে। বিরোধী দলগুলোর অভিযোগ, এনআরসি প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পর থেকে ৪৪ জন আত্মহত্যা করেছেন। যদিও এক্ষেত্রে সরকারি কোনো হিসাব পাওয়া যায় না। সূত্র : ডয়েচে ভেলে



সর্বশেষ সংবাদ
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
প্রতিষ্ঠাতা বীর মুক্তিযোদ্ধা জয়নাল হাজারী।   ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: গোলাম কিবরীয়া হাজারী বিটু্।   প্রকাশক: মোঃ ইব্রাহিম পাটোয়ারী।
সহ সম্পাদক- রুবেল হাসান: ০১৮৩২৯৯২৪১২।  বার্তা সম্পাদক : জসীম উদ্দিন : ০১৭২৪১২৭৫১৬।  সার্কুলেশন ম্যানেজার : আরিফ হোসেন জয়, মোবাইল ঃ ০১৮৪০০৯৮৫২১।  রিপোর্টার: ইফাত হোসেন চৌধুরী: ০১৬৭৭১৫০২৮৭।  রিপোর্টার: নাসির উদ্দিন হাজারী পিটু: ০১৯৭৮৭৬৯৭৪৭।  মফস্বল সম্পাদক: রাসেল: মোবা:০১৭১১০৩২২৪৭   প্রকাশক কর্তৃক ফ্ল্যাট নং- এস-১, জেএমসি টাওয়ার, বাড়ি নং-১৮, রোড নং-১৩ (নতুন), সোবহানবাগ, ধানমন্ডি, ঢাকা থেকে প্রকাশিত এবং সিটি প্রেস, ইত্তেফাক ভবন, ১/আর কে মিশন রোড, ঢাকা-১২০৩ থেকে মুদ্রিত।  বার্তা, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ০২-৪১০২০০৬৪।  ই-মেইল : [email protected], web : www.hazarikapratidin.com
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা বা ছবি অনুমতি ছাড়া নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি