শিরোনাম: |
বুড়িগঙ্গা দূষণ, সংশ্লিষ্টদের প্রতিবেদন গ্রহণ করেননি হাইকোর্ট
|
স্টাফ রিপোর্টার॥
আদেশ অনুযায়ী বুড়িগঙ্গার ময়লা-আবর্জনাযুক্ত পানির দূষণ রোধে কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে, নাকি আজও হয়নি, হয়ে থাকলে উন্নতির পর্যায়ের ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের প্রতিবেদন গ্রহণ করেননি হাইকোর্ট। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক, বিআইডব্লিটিএ’র চেয়ারম্যান, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, বিআইডব্লিউটিএ’র পরিচালক (পোর্ট অ্যান্ড ট্রাফিক) এবং ঢাকার জেলা প্রশাসককে রায় বাস্তবায়নে কী কী অগ্রগতি হয়েছে তার প্রতিবেদন দিতে বলেছেন আদালত। আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক, বিআইডব্লিটিএ’র চেয়ারম্যান, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, ঢাকার জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে দেয়া চারটি প্রতিবেদনের কোনোটিই আদালত গ্রহণ করেনি। কারণ আদালতের নির্দেশ বাস্তবায়নের বিষয়ে প্রতিবেদনে কিছু ছিল না। আদালত এক সপ্তাহ সময় দিয়েছেন। এ সময়ের মধ্যে রায় বাস্তবায়নের বিষয়ে পদক্ষেপগুলো লিখিত আকারে জানাতে বলেছেন। আগামী মঙ্গলবার (২৩ জুলাই) পরবর্তী আদেশের জন্য রাখা হয়েছে বলে জানান আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। পরিবেশ ও মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবি) পক্ষে সম্পূরক এক আবেদনের শুনানিতে সোমবার হাইকোর্টের বিচারপতি গোবিন্দ চন্দ্র ঠাকুর ও বিচারপতি মোহাম্মদ উল্লাহর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আদালতে আজ শুননি করেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী এম এ মাসুম, বিআইডব্লিউটিএ পরিচালকের (পোর্ট অ্যান্ড ট্রাফিক) পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মাহফুজুর রহমান আর পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষে শুনানিতে আইনজীবী ছিলেন নাজমুল হক। মনজিল মোরসেদ সাংবাদিকদের বলেন, বুড়িগঙ্গার পানি দূষণ নিয়ে রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১১ সালে হাইকোর্ট ওয়াসাসহ সংশ্লিষ্টদের প্রতি রায় দিয়েছিলেন যে, বর্জ্য বুড়িগঙ্গায় ফেলা যাবে না এবং সুয়ারেজ লাইনগুলো বন্ধ করতে হবে। সেটি বাস্তবায়ন না হওয়ায় আমরা আবেদন করেছিলাম ২ মে। আবেদনে হাইকোর্টের রায়ের নির্দেশনা অনুযায়ী বুড়িগঙ্গার পানি দূষণ রোধে কী কী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে, আদৌ নেয়া হয়েছে কি-না এবং নিয়ে থাকলে কী কী উন্নয়ন ঘটেছে, সে ব্যাপারে ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক, বিআইডব্লিটিএ চেয়ারম্যান, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, বিআইডব্লিউটিএ পরিচালক (পোর্ট অ্যান্ড ট্রাফিক), ঢাকার জেলা প্রশাসক, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ও লালবাগ, কামরাঙ্গীরচর, হাজারীবাগ, লালবাগ, ডেমরা ও কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে আদেশ পাওয়ার দুই সপ্তাহের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলেন আদালত। কিন্তু আজ দাখিল করা প্রতিবেদন নির্দেশনা অনুযায়ী না হওয়ায় তা আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে জমা দেয়ার জন্য বলেছেন আদালত। এ বিষয়ে আগামী মঙ্গলবার (২৩ জুলাই) শুনানি অনুষ্ঠিত হবে। বুড়িগঙ্গায় বর্জ্য ফেলা বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে তিন দফা নির্দেশনা দিয়ে ২০১১ সালের ১ জুন রায় দেন হাইকোর্ট। বিআইডব্লিউটিএ চেয়ারম্যানকে প্রতি মাসে অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল করতেও নির্দেশ দেয়া হয়। আদালত রায়ে বলেছিলেন, এ ব্যাপারে গাফিলতি হলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। বুড়িগঙ্গার পানি এমন অবস্থায় পৌঁছেছে যে একে এখন আর পানি বলা যায় না। এ পানি দূষিত হয়েছে বিষাক্ত বর্জ্যের ফলে। এতে শুধু রাজধানী ঢাকার নয়, গণমানুষের স্বাস্থ্য মারাত্মক বিপর্যয়ের সম্মুখীন। আশু ব্যবস্থা না নিলে আরও ক্ষতি হয়ে যাবে। বুড়িগঙ্গার পানি দূষণ রোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা চেয়ে ২০১০ সালে হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের পক্ষে এক আইনজীবী হাইকোর্টে রিট আবেদন করেছিলেন। ওই রিটের চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০১১ সালের জুন মাসে হাইকোর্ট রায় ঘোষণা করেন। রায়ে হাইকোর্টের নির্দেশনায় ছিল- >> বুড়িগঙ্গায় সংযুক্ত সব পয়ঃপ্রণালি (সুয়ারেজ) ও শিল্পকারখানার বর্জ্য লাইন এক বছরের মধ্যে বন্ধ করতে ওয়াসার চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দেয়া হয়। >> নদীতে বর্জ্য না ফেলার জন্য প্রতি মাসে নদীর দুই পারে সচেতনতামূলক অনুষ্ঠান করতে ঢাকা সিটি করপোরেশনকে নির্দেশ দেয়া হয়। >> নদীর তীরে সিটি করপোরেশনের কোনো ভ্যান বা গাড়ি ময়লা ফেলতে পারবে না, বিশেষ দলের (লোকের) মাধ্যমে নদীতীরের বর্জ্য অপসারণের নির্দেশ দিয়ে বলা হয়। একই সঙ্গে, নদী-তীরবর্তী এলাকায় সাইনবোর্ড ও প্ল্যাকার্ডের ব্যবস্থা করতে হবে, যাতে আদালতের রায় সম্পর্কে জনগণ সচেতন হতে পারে। রায়ের বরাত দিয়ে আইনজীবী মনজিল মোরসেদ জানান, বিআইডব্লিউটিএর কর্মকাণ্ডে ক্ষোভ প্রকাশ করে আদালত বলেছিলেন, অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, পরিবেশ রক্ষার দায়িত্ব কারোরই নয়। এ প্রতিষ্ঠানটি দায়িত্ব পালন থেকে বিরত থাকছে বলেই আজ এ অবস্থা। জনগণের অর্থে পরিচালিত প্রতিষ্ঠানটি তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করছে না। অথচ প্রতিষ্ঠানটির দায়িত্ব হচ্ছে নদী দূষণমুক্ত রাখা ও ভূমিদস্যুদের হাত থেকে রক্ষা করা। আদালত রায়ে আরও বলেন, এ অবস্থা কোনোভাবেই চলতে দেয়া যায় না। অর্পিত দায়িত্ব তারা কতটুকু পালন করেছে, তা সবার কাছে প্রশ্ন। এমনকি গত কয়েক দিনে পত্রিকায় প্রকাশিত ছবিতে বুড়িগঙ্গার অসহায়ত্ব প্রকাশ পেয়েছে। আদালতের নির্দেশনা পুরোপুরি বা নিয়মিতভাবে প্রতিপালন না করায় বুড়িগঙ্গার পানির দূষণ থামছে না। |