শুক্রবার, ২৯ মার্চ, 2০২4
গভীর ষড়যন্ত্রের আলামত
পীর হাবিবুর রহমান
Published : Thursday, 25 July, 2019 at 10:35 AM

একের পর এক ঘটে যাওয়া সব ঘটনা একটি চিত্রপটে নিয়ে এলে পর্যবেক্ষকদের মনে এই আশঙ্কা জন্ম নেবে যে, দেশে একটা গভীর ষড়যন্ত্র চলছে। রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে মিথ্যাচারের ষড়যন্ত্র। ইমেজ নষ্ট করার ষড়যন্ত্র। সরকারকে ব্যর্থ বলে প্রমাণ করার এক গভীর রহস্যময় তৎপরতার ষড়যন্ত্র। এ ষড়যন্ত্র রাষ্ট্রকে ও সরকারকে কঠোর হাতে মোকাবিলা করতে হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সব ষড়যন্ত্রের নেটওয়ার্ক গভীরে গিয়ে উদ্ঘাটন করতে হবে এবং এসব অপকর্মের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে যারা জড়িত তাদের আটক করে আইনের আওতায় নিয়ে প্রাপ্য শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সাঁড়াশি অপারেশন চালিয়ে সফল হতে হবে। একই সঙ্গে এ ধরনের অপপ্রচার অপরাধ দমনে জনগণকে সুসংগঠিত করতে শাসক দলকে রাজনৈতিকভাবে উদ্যোগ নিতে হবে। সারা দেশে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা জনমত গঠনের মাধ্যমে জনগণের মধ্য থেকে সব ভয় ও আতঙ্ক দূর করে সমাজের অস্থিরতা নিরসন করতে হবে। অপরাধী যেই হোক সে আইনের ঊর্ধ্বে নয়। এমনকি সে যেই হোক তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে বিলম্ব করা যাবে না। পদ্মা সেতুতে মানুষের জবাই করা মাথা লাগবে বলে যারা অপপ্রচার চালিয়েছে তাদের অনেককে প্রশাসন চিহ্নিত করেছে। অপপ্রচার চালানোর অভিযোগে অনেক নিউজ পোর্টাল, ফেসবুক পেজ ও ইউটিউব বন্ধ করে দিয়েছে পুলিশ। এর প্রয়োজন ছিল। বছরের পর বছর গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্টের পরও তথ্য মন্ত্রণালয় অনলাইন নিউজ পোর্টালকে এখনো অনুমোদন দেয়নি। যাদের অনুমোদন দেওয়া উচিত তাদের অনুমোদন দিয়ে অনুমোদনহীন সব নিউজ পোর্টাল বন্ধ করে দিতে হবে। একুশ শতকের বিজ্ঞানমনস্ক তথ্য প্রযুক্তির চূড়ান্ত বিকাশে উন্নয়নের মহাসড়কে যাত্রা করা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ যেখানে যুক্ত হয়েছে, অবাধ তথ্য প্রবাহের এই যুগে এ ধরনের মধ্যযুগীয় কাপালিক মিথ বা মানুষের মাথার অপপ্রচার চলতে পারে না। যমুনা সেতু বা বঙ্গবন্ধু সেতুতে যখন এ ধরনের প্রচারণা হয়নি সেখানে পদ্মা সেতুর কাজ প্রায় যখন শেষ লগ্নে তখন এ ধরনের ভয়ঙ্কর অপপ্রচার ষড়যন্ত্রের ভয়ঙ্কর আলামত ছাড়া কিছুই নয়।

ছেলেধরা সন্দেহে একের পর এক মানুষ হত্যা গোটা দেশের মানুষকে আতঙ্কগ্রস্ত করে তুলেছে। এ আতঙ্ক থেকে দেশকে বের করে না আনতে পারলে সমাজ জীবনে এই জঘন্য পথ ব্যক্তিগত শত্রুতা বা সমাজ জীবনের নানামুখী বিরোধে হিংসাত্মক মানুষ পরস্পরের বিরুদ্ধে কাজে লাগাতে পারে। বাড্ডায় সিঙ্গেল মাদার তসলিমা বেগম রেণু সন্তানদের নিয়ে জীবনের কঠিন লড়াই করছিলেন। ছোট বাচ্চাকে স্কুলে ভর্তি করাতে গিয়ে কী নিষ্ঠুরভাবে তাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে, ভিডিও ভাইরাল করা হয়েছে। গোটা দেশের মানুষকে স্তম্ভিত ও বিষাদগ্রস্ত করে দিয়েছে। এই বর্বর হত্যাকান্ডে র সঙ্গে মানসিক বিকারগ্রস্ত যেসব সন্তানতুল্য তরুণ অংশ নিয়েছিলেন, তাদের একজনকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। এই ছেলেধরা আতঙ্ক ছড়িয়ে গণপিটুনিতে গণহত্যার মধ্য দিয়ে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকার ব্যর্থ এটি প্রমাণ করার গভীর ষড়যন্ত্র হচ্ছে। পুলিশের আইজিপি ড. জাবেদ পাটোয়ারী ও র‌্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ যারা গুজব ছড়াচ্ছেন ও অপরাধ করছেন তাদের বিরুদ্ধে কঠোর মনোভাব প্রকাশ করেছেন। তারা বসে নেই। এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় র‌্যাব ও পুলিশকে সহযোগিতা করা জনগণের নৈতিক দায়িত্ব। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের বাইরে গেলেই একটা অস্থিরতা তৈরির চেষ্টা হয় দেখা যাচ্ছে। এই গুজব, এই ছেলেধরা ও গণপিটুনি কঠোর হস্তে দমন করা অনিবার্য হয়ে উঠেছে।

এর আগে সিরিজ ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়নের ঘটনায় গোটা দেশকে আক্রান্ত করা হয়েছে। এসব ঘটনার সঙ্গে বরগুনায় রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ছায়ায় গড়ে ওঠা সন্ত্রাসী বাহিনী মাদক ব্যবসার সিন্ডিকেট ও রিফাত হত্যাকান্ডে র ভয়াবহতা দেশ দেখেছে। ফেনীর ঘটনার মতো নানা নাটকীয়তার পর এখানেও এখন তদন্তের দায়িত্ব পিবিআইকে দেওয়া প্রয়োজন। স্থানীয় এমপি ও পুলিশ প্রশাসন কীভাবে নয়ন বন্ডদের সঙ্গে জড়িয়ে ছিলেন, পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েছিলেন সেই খবর যেমন উঠে আসছে তেমনি কথিত বন্দুকযুদ্ধে নয়ন বন্ডের হত্যাকা ও মিন্নির আসামি হিসেবে রিমান্ড অনেক রহস্যের জন্ম দিয়ে আসছে। এমপির বিষয়ে তার দলকে এবং পুলিশ সুপারের ব্যাপারে তার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে ভাবতে হবে। তাদের রেখে সেখানে এই হত্যাকান্ডে র ন্যায়বিচার ও অপরাধ জগৎ উৎখাত কতটা সম্ভব সেই প্রশ্ন রয়েছে।

দুদকের সহকারী পরিচালক মলয় সাহার স্ত্রী ও অবসরপ্রাপ্ত উপসচিব জগদীস দাশের বোন প্রিয়া সাহা মার্কিন প্রেসিডেন্টের কাছে গিয়ে বাংলাদেশকে যেভাবে দুনিয়ার বুকে একটি সাম্প্রদায়িক ও সংখ্যালঘু নিপীড়ক রাষ্ট্র হিসেবে চিহ্নিত করে ৩ কোটি ৪০ লাখ সংখ্যালঘু গুম হয়েছে বলে দাবি করেছেন তাতে নির্লজ্জ রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধ করেছেন। এ ধরনের ঘটনার নেপথ্যে অবশ্যই জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের নেটওয়ার্ক রয়েছে। এই নেটওয়ার্ক ও তার নেপথ্য এবং সক্রিয় সহযোগীদের মুখোশ উন্মোচন রাষ্ট্রের সব গোয়েন্দা সংস্থারও দায়িত্ব। একজন প্রিয়া সাহাকে সাধারণ মানুষ হিসেবে বিবেচনায় নিলেও তিনি যা ঘটিয়েছেন সেটি রাষ্ট্রের জন্য ভয়ঙ্কর ঘটনা। একজন মামুলি মানুষকে চরিত্রহীন বলায় দেশের অনেকে চরিত্রহারা হয়েছেন। সারা দেশে মামলার মিছিল ঘটিয়ে ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনকে জেল খাটিয়েছিলেন। আরেকজন প্রিয়া সাহা গোটা রাষ্ট্রকে চরিত্রহীন করে দিয়েছেন। সেখানে অনেকে এটাকে ছোট ঘটনা বলে একটি মামলাও দায়ের করতে দেননি। ব্যারিস্টার মইনুলের বিরুদ্ধে যেসব মা-খালা প্রতিবাদী হয়েছিলেন, যেসব পিতৃতুল্য ও ভ্রাতৃতুল্য মানুষেরা প্রতিবাদী হয়েছিলেন তারা এখন নীরব। প্রধানমন্ত্রী দেশে এলে নিশ্চয়ই জাতির উদ্দেশে সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে একটি ভাষণ বা সংবাদ সম্মেলন করবেন। কিন্তু তিনি আসার আগে হলেও সরকারের পক্ষ থেকে সামগ্রিক বিষয় নিয়ে একটি সংবাদ সম্মেলন করে সামগ্রিক পরিস্থিতিতে মানুষকে নানা গুজব ও অপরাধে জড়িত না হওয়ার আহ্বান জানাতে পারেন এবং জড়িত হলে কঠোর ব্যবস্থা যে নেওয়া হবে সেই সতর্ক হুঁশিয়ারি দিতে পারেন।

শেয়ারবাজার বিপর্যয় নিয়ে অনেক লেখা হয়েছে। বিপর্যস্ত করুণ শেয়ারবাজার থেকে তিন দিনে এই সময়ে ১৫ হাজার কোটি টাকা মূলধন নিয়ে যাওয়া হয়েছে। একই সময়ে চারদিকে এত ঘটনা কিসের আলামত?

প্রিয়া সাহা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ দিয়েছেন তাতে ৩০ লাখ শহীদের রক্তে অর্জিত বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশকে আজকে শেখ হাসিনা ১০ বছরে যে সম্প্রীতির সুতায় বেঁধেছেন সেখানে তিনি দুনিয়ার সামনে কঠিন আঘাত করেছেন। প্রিয়া সাহার অপরাধের জন্য সংবিধান ও আইনের আলোকে তিনি দায়ী। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যারা প্রিয়া সাহার পক্ষে সাফাই গাইছেন তারা রাষ্ট্রবিরোধী অপরাধকে উসকানি দিচ্ছেন। আর যারা প্রিয়া সাহার অপরাধের জন্য হিন্দু সম্প্রদায়কে আক্রমণ করছেন তারা ভিতরে পুষে রাখা সাম্প্রদায়িকতার বিষ ছড়াচ্ছেন। দুটিই অপরাধ। আমরা আমাদের সম্প্রীতির বাঁধন আরও শক্ত করে ধরে রাখতে চাই। সমাজে শাস্তি, শৃঙ্খলা ও ন্যায়বিচার চাই। আমরা সুশাসন চাই। আমরা গণতান্ত্রিক সমাজ চাই। আমরা ভঙ্গুর হলেও সাংবিধানিক গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা অব্যাহত দেখতে চাই। কোনো অশুভ শক্তির উত্থান এই দেশের জন্য অতীতে যেমন সুখকর হয়নি, ভবিষ্যতেও হবে না। তাই সব পরিস্থিতি মিলে যে গভীর ষড়যন্ত্রের আলাতম দেখা যাচ্ছে, তার মূলোৎপাটন চাই। শাসক দল আওয়ামী লীগকেও তার আদর্শবান নেতা-কর্মী ও জনগণকে নিয়ে নিজের রাজনৈতিক শক্তি নিয়ে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া উচিত। তাদের মনে রাখা উচিত, দুঃসময়ে পরীক্ষিতরাই তাদের মূল শক্তি। গত ১০ বছর ধরে যেসব দলদাস দলদাসী থেকে শুরু করে এককালের কট্টর বঙ্গবন্ধু, শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ বিদ্বেষীরা মুজিবকন্যার চেয়েও বিভিন্ন পেশা থেকে রাজনীতির বারান্দা পর্যন্ত বড় আওয়ামী লীগ ভক্ত হয়েছেন এরা বিপদ দেখলেই কেটে যাবে। এরা বিএনপি থেকে কেটেছিল। এরা অনেকের কাছ থেকে কেটে পড়ে এসেছে সুবিধাভোগ করতে। দলকে সাবধান থাকতে হবে। যেখানে বিভিন্ন পেশায় এককালের মুজিববিদ্বেষী ও কট্টর শেখ হাসিনা বিরোধীরা বিপজ্জনক সেখানে চিহ্নিত বহুল আলোচিত রাজাকার সন্তানরা আরও বেশি ভয়ঙ্কর। এদের ব্যাপারেও সতর্ক থাকা জরুরি।

লেখক : নির্বাহী সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রতিদিন।


সর্বশেষ সংবাদ
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
প্রতিষ্ঠাতা বীর মুক্তিযোদ্ধা জয়নাল হাজারী।   ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: গোলাম কিবরীয়া হাজারী বিটু্।   প্রকাশক: মোঃ ইব্রাহিম পাটোয়ারী।
সহ সম্পাদক- রুবেল হাসান: ০১৮৩২৯৯২৪১২।  বার্তা সম্পাদক : জসীম উদ্দিন : ০১৭২৪১২৭৫১৬।  সার্কুলেশন ম্যানেজার : আরিফ হোসেন জয়, মোবাইল ঃ ০১৮৪০০৯৮৫২১।  রিপোর্টার: ইফাত হোসেন চৌধুরী: ০১৬৭৭১৫০২৮৭।  রিপোর্টার: নাসির উদ্দিন হাজারী পিটু: ০১৯৭৮৭৬৯৭৪৭।  মফস্বল সম্পাদক: রাসেল: মোবা:০১৭১১০৩২২৪৭   প্রকাশক কর্তৃক ফ্ল্যাট নং- এস-১, জেএমসি টাওয়ার, বাড়ি নং-১৮, রোড নং-১৩ (নতুন), সোবহানবাগ, ধানমন্ডি, ঢাকা থেকে প্রকাশিত এবং সিটি প্রেস, ইত্তেফাক ভবন, ১/আর কে মিশন রোড, ঢাকা-১২০৩ থেকে মুদ্রিত।  বার্তা, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ০২-৪১০২০০৬৪।  ই-মেইল : [email protected], web : www.hazarikapratidin.com
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা বা ছবি অনুমতি ছাড়া নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি