শুক্রবার, ২৯ মার্চ, 2০২4
পুলিশের হস্তক্ষেপে সন্তানের বাড়িতে শতবর্ষী বাবার ঠাঁই
হাজারিকা অনলাইন ডেস্ক
Published : Friday, 23 August, 2019 at 9:23 AM

বয়স একশ পেরিয়েছে বহু আগে। নানা দুঃখ কষ্ট, সংগ্রাম শেষে বহু দিন আগে থেকেই আর বাঁচতে ইচ্ছে করে না নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ের বন্দর আলীর। কারণ, শেষ জীবনে এসে তিনি নিজের সন্তানদের কাছ থেকে যে অবহেলা, অবজ্ঞা পেয়েছেন, সেটি তার কাছে মৃত্যুর চেয়ে কঠিন মনে হয়েছে। মাথার উপর ঠাঁই, তিন বেলা খাবার আর এই বয়সে চলাফেরায় একটু খুঁটি হবে না নিজের সন্তানরা- এটা ছিল বন্দর আলীর সবচেয়ে কষ্টের। নিজের আয় করার উপায় নেই, কিন্তু ক্ষুধাও মেটে না- এই অবস্থায় ছুটে গেলেন থানায়। সন্তানদের বিরুদ্ধে দিলেন অভিযোগ।

বন্দর আলীর অসহায়ত্ব শুনে পুলিশের কঠিন মনও কেঁপে ওঠে। তার সন্তানদের তলব করা হয়। বিষয়টি সামাজিকভাবে সমাধান করতে কাজে লাগানো হয় স্থানীয় জনপ্রতিনিধিকেও। আর বন্দর আলীকে ঠিক মতো খাওয়া, পরা দেওয়া হবে বলে মুচলেকা দিয়ে তাকে নিয়ে যান সন্তানরা। পুলিশ জানিয়ে দেয়, এই বৃদ্ধের বিষয়টি নিয়ে তারা নিয়মিত খোঁজখবর রাখবে। অযতœ হলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। আর তার জন্য মাসোহারার ব্যবস্থাও করা হবে। মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে লাঠিতে ভর করে সোনারগাঁও থানায় যান বন্দর আলী। উপজেলার চরভবনাথপুর গ্রামের বাসিন্দা তিনি। থানায় গিয়ে খুঁজতে থাকেন দারোগা আবুল কালাম আজাদকে।

এত প্রবীণ একজন মানুষ থানায় কেন এসেছেন, জানতে চায় পুলিশ। বন্দর আলী কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘বাবা তুমি আমারে বাঁচাও। আমার পোলা, পোলার বউ খাওয়ন দেয় না এবং খোঁজখবর রাখে না, মারে।’ দারোগা আজাদ অভিযোগ শুনে বন্দর আলীকে নিয়ে যান চরভবনাথপুর গ্রামে। গিয়ে দেখেন প্রবীণ মানুষটির জীবনের করুণ চিত্র। গোয়াল ঘরের মতো একটি ছাপড়ায় থাকতেন বন্দর আলী। সেটি পলিথিন দিয়ে ঘেরা। পরে আজাদ ঘটনাটি জানান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মনিরুজ্জামানকে। তিনি বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন স্থানীয় পিরোজপুর ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মোশাররফ হোসেনের সঙ্গে। পরে তার বাসাতেই বন্দর আলীকে নিয়ে বসে সালিশ। উপপরিদর্শক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘বন্দর আলীর ছেলেরা তার বাবাকে আর জুলুম করবে না- এমন মুচলেকা দিয়েছে। তারপরও যদি তারা ভরণ পোষণের দায়িত্ব না নেয় তাহলে এই বৃদ্ধ বাবার দায়িত্ব আমি নিলাম। আমিও আজ থেকে হয়ে গেলাম তার একজন সন্তান এবং তাকে দেখাশোনার দায়িত্বটা আমার কাঁধেও নিয়ে নিলাম।’

‘তবে আশা করি, এখন বৃদ্ধ বাবার থাকা, খাওয়ার সমস্যা হবে না। কারণ, তার ছেলেরা এবং ছেলের বউরা ভুল বুঝতে পেরেছে।’ স্থানীয় জনপ্রতিনিধি মোশাররফ হোসেন জানান, ‘এস আই আবুল কালাম আজাদ আমাকে ফোন করে সামাজিকভাবে বিষয়টি সমাধানের কথা বলেন। তাকে নিয়ে আমার বাসায় বসে বন্দর আলীর ছেলেদের ডেকে আনি। এরপর একটা ফয়সালা করে দিয়েছি।’ ‘সালিশে মধ্যে বন্দর আলীর ছেলেরা মুচলেকা দিয়েছে, তারা বাবাকে আর অবহেলা করবে না, ঠিকমত খেতে দেবে। তিনি ছয় মাস থাকবেন ছেলে আব্দুর রহিমের কাছে এবং বাকি ছয় মাস থাকবেন মোতালেব ও আব্দুল জব্বারের কাছে। পুলিশ কর্মকর্তা আজাদ এবং আমি প্রতি সপ্তাহে বন্দর আলীর জন্য পাঁচশ টাকা করে দেব।’

মোশাররফ হোসেন জানান, বন্দর আলীর গায়ে শক্তি থাকার সময় এলাকায় মুড়ির ব্যবসা করতে। তার বাড়িতে হাতে ভাজা মুড়ি তৈরি হতো এবং তা স্থানীয় বাজারে বিক্রি হতো। বন্দর আলী ১২৮ বললেও মূলত বয়স ১০৮ বছর। তার তিন জন স্ত্রী ছিলেন, সন্তান আট জন। এক মাস আগে তৃতীয় স্ত্রী ফুলবাহারও মারা যান। এরপর থেকেই দুর্দশার শুরু। প্রথম স্ত্রী আলবাহারের ঘরে তিন সন্তান; আবদুল মোতালেব, আবদুল মান্নান এবং মোমেনা খাতুন। দ্বিতীয় স্ত্রী সাজেমুনের সংসারেও তিন সন্তান; আব্দুল জব্বার, আব্দুর রহিম ও নুরতাজ বেগম। আর তৃতীয় স্ত্রী ফুলবাহারের ঘরে সন্তান আরজুদা এবং ফাতেমা।


সর্বশেষ সংবাদ
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
প্রতিষ্ঠাতা বীর মুক্তিযোদ্ধা জয়নাল হাজারী।   ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: গোলাম কিবরীয়া হাজারী বিটু্।   প্রকাশক: মোঃ ইব্রাহিম পাটোয়ারী।
সহ সম্পাদক- রুবেল হাসান: ০১৮৩২৯৯২৪১২।  বার্তা সম্পাদক : জসীম উদ্দিন : ০১৭২৪১২৭৫১৬।  সার্কুলেশন ম্যানেজার : আরিফ হোসেন জয়, মোবাইল ঃ ০১৮৪০০৯৮৫২১।  রিপোর্টার: ইফাত হোসেন চৌধুরী: ০১৬৭৭১৫০২৮৭।  রিপোর্টার: নাসির উদ্দিন হাজারী পিটু: ০১৯৭৮৭৬৯৭৪৭।  মফস্বল সম্পাদক: রাসেল: মোবা:০১৭১১০৩২২৪৭   প্রকাশক কর্তৃক ফ্ল্যাট নং- এস-১, জেএমসি টাওয়ার, বাড়ি নং-১৮, রোড নং-১৩ (নতুন), সোবহানবাগ, ধানমন্ডি, ঢাকা থেকে প্রকাশিত এবং সিটি প্রেস, ইত্তেফাক ভবন, ১/আর কে মিশন রোড, ঢাকা-১২০৩ থেকে মুদ্রিত।  বার্তা, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ০২-৪১০২০০৬৪।  ই-মেইল : [email protected], web : www.hazarikapratidin.com
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা বা ছবি অনুমতি ছাড়া নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি