শিরোনাম: |
পরিবারটির সঙ্গে কথা বললেই ১ হাজার টাকা জরিমানা ঘোষণা মসজিদ কমিটির!
|
জেলা প্রতিনিধি ॥
৯০ বছরের বৃদ্ধ জয়নাল আবেদীন। লাঠি ছাড়া চলতে পারেন না। বাড়ি থেকে ৫০ গজ দূরের মসজিদে তিনিসহ তার পরিবারের নামাজ পড়া নিষেধ। ঐ পরিবারের সঙ্গে কেউ কথা বললে এক হাজার টাকা জরিমানার ঘোষণা দিয়ে মসজিদ কমিটি সামাজিকভাবে তাকে একঘরে করে রেখেছে। একঘরে করে রাখার বিষয়টি শুধু মুখে নয় মসজিদ কমিটির প্রভাবশালীরা রেগুলেশন করে সকলের সই স্বাক্ষরও নিয়েছেন বলে স্বীকার করেছেন। বৃদ্ধ জয়নাল আবেদীনের ৫ ওয়াক্ত নামাজ বাড়িতেই আদায় করতে হচ্ছে এখন। ঘটনাটি ঘটেছে ময়মনসিংহের ফুলবাড়ীয়া উপজেলার ভবানীপুর ইউনিয়নের ভবানীপুর পশ্চিমপাড়া গ্রামে। উপজেলার ভবানীপুর পশ্চিমপাড়া গ্রামে মঙ্গলবার গিয়ে দেখা গেছে সমাজের সকলেই মসজিদে নামাজ আদায় করছেন। আর বাড়ি থেকে মসজিদ দেখা বৃদ্ধ জয়নাল আবেদীন তার বাড়িতে জোহরের নামাজ আদায় করছেন। নামাজ শেষে কথা হয় জয়নাল আবেদীনের সঙ্গে। তিনি বলেন, 'মসজিদটি আমার বাড়ি থেকে ৫০ গজ দূরে। মসজিদের প্রগ্রাবখানা ও ল্যাট্রিন আমার জমিতে। আমার কাছে থাকা মসজিদের প্রগ্রাব ও ল্যাট্রিনের চাবি ১০/১২ দিন আগে নিয়ে নেন মসজিদ কমিটির ক্যাশিয়ার হোসেন আলী। এ নিয়ে হোসেন আলীর সঙ্গে আমার কথাকাটাকাটি হয়। গত ১৬ আগস্ট শুক্রবার আমি মসজিদে নামাজ পড়তে গেলে মসজিদ কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুছ ছালামসহ কমিটির লোকজন আমাকে গালমন্দ করে মসজিদ থেকে বের করে দেন। আমি সেদিন জুম্মার নামাজ মসজিদে আদায় করতে পারিনি। সেদিন জুম্মার নামাজ শেষে আমার পুরো পরিবারকে সামাজিকভাবে একঘরে করাসহ সমাজের কেউ কথা বললে তাকে এক হাজার টাকা জরিমানার কথা উল্লেখ করে সকলের সই স্বাক্ষর নিয়ে রেগুলেশন করা হয়। আমাকে সামাজিকভাবে একঘরে করে রাখার পর থেকে আমাকে মসজিদে নামাজ পড়তে দেওয়া হচ্ছে না। ভয়ে সমাজের লোকজন কথা পর্যন্ত বলছেন না।' বৃদ্ধ জয়নাল আবেদীনের পুত্র শফিক বলেন, 'আমরা ৫ ভাই। আমার আব্বা প্রবীণ মানুষ। তাকে এভাবে প্রকাশ্যে সামাজিকভাবে একঘরে করে রাখা কি ঠিক হয়েছে? আমার বৃদ্ধ বাবা ভুলত্রুটি করে থাকলে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ আছে সেখানে বিচার দিতে পারতো। এতে করে আমাদের পরিবারের সকল শিশুদের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়বে।' মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান কাঞ্চন একঘরে করে রাখার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, 'আসলে ভয় দেখানোর জন্য একঘরে করা হয়েছে।' মসজিদ কমিটির সভাপতি আব্দুস ছালাম বলেন, 'বৃদ্ধ লোকটি আসলে ভালো না। তাকে সঠিক পথে আনার জন্য একঘরে করে রাখা হয়েছে। ভয় দেখানোর জন্য রেগুলেশন ও সকলের স্বাক্ষর নেওয়া হয়েছে।' স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার জাকির হোসেন (শহীদ) জানান, তিনি লোকমুখে সামাজিকভাবে এক ঘরে করে রাখার বিষয়টি শুনেছেন। তবে যারাই এ কাজটি করুক কাজটি ভালো হয়নি। ভবানীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহীনুর মল্লিক জীবন বলেন, 'সামাজিকভাবে একঘরে করে রাখার বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে আমি খোঁজ নেবো।' ফুলবাড়ীয়া থানার অফিসার ইনচার্জ ফিরোজ তালুকদার বলেন, 'সামাজিকভাবে একঘরে করে রাখার বিষয়ে থানায় কেউ কোন অভিযোগ দেয়নি।' |