শিরোনাম: |
সোনাগাজীতে নারী প্রতারকের খপ্পরে পড়ে গণধর্ষণের শিকার বিধবা গৃহবধূ
|
ফেনী প্রতিনিধি ॥
সোনাগাজীতে প্রতিপক্ষের হালার শিকার বিধবা গৃহবধূ থানায় মামলা করতে গিয়ে রহিমা সুন্দরী (৪০) নামে এক নারী প্রতারকের খপ্পরে পড়ে গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন। এ ঘটনায় নারী প্রতারক রহিমা সুন্দরী ও সঞ্জু শিকদারকে (৩৫) গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। রহিমা সুন্দরী চরদরবেশ ইউনিয়নের চরসাহাভিকারী গ্রামের নূরুজ্জামানের কন্যা ও সঞ্জু শিকদার দাগনভূঞা উপজেলার খোকন শিকদারের ছেলে। সোনাগাজী পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ডের চরগণেশ গ্রামের কলেজ রোডের মাঝি বাড়ির খোকন মিয়ার মালিকীয় রহিমা সুন্দরীর ভাড়া বাসায় ১৫ সেপ্টেম্বর রোববার দিবাগত গভীর রাতে এ ঘটনা ঘটে। এসময় দুর্বৃত্তরা তার সাথে থাকা এক ভরি স্বর্ণালঙ্কার ও একটি মোবাইল ফোন লুটে নেয়। এঘটনায় ওই গৃহবধূ বাদি হয়ে সঞ্জু শিকদার, রহিমা সুন্দরী ও আফলাছ হোসেনের সহ ৩ জনের নাম উল্লেখ করে ও আরো ৩ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা দায়ের করেছেন। পুলিশ, এলাকাবাসী ও নির্যাতিত গৃহবধূ জানান, আমিরাবাদ ইউনিয়নের উত্তর সোনাপুর গ্রামের সাহাব উদ্দিন ওই নারী কে দত্তক নিয়ে লালন পালন করেন। উপজেলার বগাদানা ইউনিয়নের মান্দারী গ্রামের জনৈক রিপন নামে এক যুবলীগ কর্মীর কাছে ১৪ বছর পূর্বে বিয়ে দেন। গত ৩ বছর পূর্বে আধিপত্যের জের ধরে স্থানীয় সন্ত্রাসীরা রিপনকে গুলি করে হত্যা করে। সে ১৩ বছর ও ৭ বছর বয়সী দুই সন্তান নিয়ে পালক বাবার বাড়িতে আশ্রয় নেয়। নি:সন্তান পালক বাবা তার নামে বসত বাড়িতে জমি দান করার প্রস্তাব করেন। এ খবর জানাজানি হলে সাহাব উদ্দিনের ভাই ও ভাতিজারা ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন। গত ১০ সেপ্টেম্বর নি: সন্তান দম্পতি সাহাব উদ্দিন, তার স্ত্রী রোশনা খাতুন ও পালক কন্যাকে ভাই কালা মিয়া ও তার ছেলে মাসুদ সহ কয়েকজন মিলে পিটিয়ে আহত করে। ওই ঘটনায় ওইদিন পালক কন্যা বাদি হয়ে সোনাগাজী মডেল থানায় চাচা, চাচি ও চাচাতো ভাইয়ের বিরুদ্ধে সোনাগাজী মডেল থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। কর্তব্যরত পুলিশ কর্মকর্তা যাতায়াত খরচ চাইলে দিতে পারেননি অসহায় ওই নারী। অভিযোগ দিয়ে নিরাশ হয়ে বের হওয়ার সময় থানার মাঠে দেখা মিলে রহিমা সুন্দরী নামের প্রতারক ওই নারীর। সে নিজেকে পুলিশ পরিচয় দিয়ে ওই নারীকে তার বাসায় নিয়ে যান। সেখানে তাকে রেখে পুলিশ পাঠিয়ে ব্যবস্থা নিয়েছি বলে তাকে বোন ডেকে তার বাসায় রেখে দেন। এদিকে বাড়ির চাচা ও চাচাতো ভাইয়ের ভয়ে ওই নারী পালক পিতার বাড়িতে যেতে পারছেনা। থানা পুলিশও কোন ব্যবস্থা নেননি। প্রথম ঘটনার পঞ্চম দিনে ১৫ সেপ্টেম্বর দিবাগত রাত ১২টার দিকে শম্ভু শিকদার, আফলাছ সহ ৫ জন যুবককে পুলিশের লোক বলে তার উপর লেলিয়ে দেয়। ওই অসহায় নারী কে তারা পালাক্রমে ধর্ষণ করে। ধর্ষকদের সাথে ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে ওই নারী অজ্ঞান হয়ে পড়লে তার সাথে থাকা ৮ আনা ওজনের একটি স্বর্ণের রিং, ৮ আনা ওজনের এক জোড়া কানের দুল ও একটি মোবাইল ফোন নিয়ে যায়। সকালে জ্ঞান ফিরলে রহিমা সুন্দরী নামের ওই প্রতারক নারীর কাছে গৃহবধূ তার উপর এই নির্যাতনের কারণে জানতে চাইলে সে সঞ্জু শিকদার ও আফলাছ নামের দুই যুবককে এনে দ্বিতীয়বার ধর্ষণ করায়। তারা ফের বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি না করার হুমকি দেয়। ঘটনাটি জানাতে ওই নারী থানায় গেলে কর্তব্যরত একজন এএসআই সুন্দরী নামের ওই প্রতারক নারীকে মুঠো ফোনে জানিয়ে দেন তোমার বিরুদ্ধে মামলা হচ্ছে। খবর পেয়ে সুন্দরী তাৎক্ষণিক থানায় এসে ওই নারীর সাথে ঝগড়ায় লিপ্ত হয়। তখন সেই পুলিশ কর্মকর্তা তাকে ধমক দিয়ে ঘটনাটি সামাজিক ভাবে সমাধান করতে বলে তাড়িয়ে দেন। ওই নারী ওই সমাজের লোকদের জানালে কেউ দায়িত্ব না নেয়ায় এক পর্যায়ে সমাজ পরিচালনা কমিটির সভাপতি-সম্পাদকের দ্বারস্থ হন। তারা ঘটনার দুইদিন পর বিষয়টি জানার পর মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে সোনাগাজী মডেল থানার ওসির কাছে নিয়ে যান। বিষয়টি অবগত হয়ে ওসি বাদিনীর ভাষ্য মতে তাৎক্ষণিক মামলাটি রুজু করেন। রাতেই অভিযান চালিয়ে সঞ্জু শিকদার ও রহিম সুন্দরী কে আটক করে। সঞ্জু শিকদার দাগনভূঞা উপজেলার খোকন শিকদারের ছেলে। সে সোনাগাজী পৌরসভার চরগণেশ গ্রামের জনৈক শেখ রেহানার বাড়িতে বসবাস করতো। একসময় সে সোনাগাজী বাজারে মুচির কাজ করতো। পরবর্তীতে খোনারী ব্যবসার সাথে জড়িয়ে যায়। তার বিরুদ্ধে ডাকাতি ও ছিনতাই সহ একাধিক মামলা রয়েছে। রহিমা সুন্দরী চরদরবেশ ইউনিয়নের চরসাহাভিকারী গ্রামের নূরুজ্জামানের কন্যা ও এক কন্যা সন্তানের জননী। সেও একজন স্বামী পরিত্যক্তা নারী। সে গত তিন বছর ধরে সোনাগাজী মডেল থানায় কর্মরত একাধিক পুলিশ কর্মকর্তার বাসায় বুয়ার কাজ করতো। সে সোনাগাজী কলেজ রোডস্থ মাঝি বাড়ির খোকা মালিকীয় ভাড়া বাসায় বসবাস করতো। সেখানে বখাটে সন্ত্রাসীদের নিয়ে বিভিন্ন প্রবাসী ও ব্যবসায়ী যুবকদের ব্ল্যাকমেইল করে টাকা আদায় করতো। একাধিক পুলিশ সদস্যের সাথে তার সখ্যতা থাকায় কেউ ভয়ে মুখ খুলতোনা। সোনাগাজী মডেল থানার ওসি মঈন উদ্দিন আহমেদ বলেন, পাশবিক নির্যাতনের শিকার গৃহবধূকে শারীরিক পরীক্ষার জন্য ফেনী জেনারেল হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। |