শুক্রবার, ২৯ মার্চ, 2০২4
বিএনপি কি বিজেপির পথ অনুসরণ করবে?
আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী
Published : Monday, 28 October, 2019 at 9:59 PM

একটা ব্যাপার হয়তো বাংলাদেশে আমাদের অনেকের দৃষ্টি এড়িয়ে গেছে। আগামী বছর ২০২০ সাল যেমন বাংলাদেশের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী, তেমনি এ বছর (২০১৯) ভারতের জাতির জনক মোহনচাদ করমচাঁদ গান্ধীর সার্ধশত জন্মবর্ষ। বিশেষ করে এই অক্টোবর মাসেই গান্ধীজির জন্ম হয়েছিল। দু’দেশে দুই জাতির জনকের সার্ধশত জন্মবর্ষ ও জন্মশতবার্ষিকী পালনের উদ্যোগের মধ্যে একটা বিরাট পার্থক্য আমার চোখে পড়ছে। অনেকের দৃষ্টি এটাই এড়িয়ে গেছে বলে আমার মনে হয়। পার্থক্যটা হল গান্ধীর সার্ধশত জন্মবার্ষিকী ভারতে মহাধুমধামে জাতীয়ভাবে পালিত হয়েছে। গান্ধীর রাজনৈতিক দল কংগ্রেস। সেই দল এখন ক্ষমতায় নেই। বরং ক্ষমতায় রয়েছে অসাম্প্রদায়িক, অহিংস রাজনীতির ঘোরবিরোধী বিজেপি।

তবু প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এই জন্মবার্ষিকীতে বাণী দিয়েছেন এবং বিজেপির নেতারা গান্ধীজির স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন এবং তাকে জাতির পিতা বলে স্বীকৃতি দিয়েছেন। বিজেপির যে চালক শক্তি রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘ বা আরএসএস, যাদের সদস্য নাথুরাম গডসে মহাত্মাকে হত্যা করেছিল সেই দল পর্যন্ত গান্ধীজির জন্মবর্ষে তাকে স্মরণ করতে এবং শ্রদ্ধা জানাতে এগিয়ে এসেছে। দেশজুড়ে ‘গান্ধীসংকল্প যাত্রা’ করেছে বিজেপি। পশ্চিমবঙ্গে করেছে ১৫ অক্টোবর থেকে ২৬ অক্টোবর, এই সংকল্প যাত্রার সাড়ে ৬ হাজার কিলোমিটার পদযাত্রায় অংশ নিয়েছেন বিজেপির সাংসদ, বিধায়ক, পুরপ্রতিনিধি, পঞ্চায়েতের সদস্যরা। এক সাংবাদিক সম্মেলনে রাজ্য বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেছেন, ‘গান্ধীজির জীবন ও তার শিক্ষাকে তুলে ধরার লক্ষ্যেই এই যাত্রা। স্বচ্ছ ভারত অভিযানের মতো যেসব কর্মসূচি ভারত সরকার গ্রহণ করেছে, গান্ধীজির ভাবনা দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে সেসব তুলে ধরা হবে।’

দিলীপ ঘোষের এই বক্তব্য শুনে বলতে ইচ্ছে করছে- সেলুকাস, বিচিত্র এই ভারতবর্ষ, মাত্র ৭১ বছর আগে যে বিজেপির সাবেক নেতা ও সমর্থকদের বিরাট এক অংশ গান্ধীজির নির্মম হত্যাকাণ্ডের খবর শুনে রাস্তায় মিষ্টি বিতরণ করেছে, নাথুরাম গডসকে দেবতা বলে শ্রদ্ধা জানিয়েছে এবং এখনও জানাচ্ছে, তাদেরই দল এখন দিল্লিতে ক্ষমতায় বসে গান্ধীজিকে শ্রদ্ধা জানাচ্ছে, তার শিক্ষা ও আদর্শ অনুসরণের কথা বলছে। এটা কি সপ্তম আশ্চর্যের একটির সঙ্গে তুলিত হওয়ার যোগ্য নয়? এটাকেই বলে রাজনৈতিক ম্যাচুরিটি, জাতির জনককে শ্রদ্ধা জানানোর মানসিক উৎকর্ষ ও অখণ্ড দেশপ্রেম। ভারতে জাতির জনকের জন্মবর্ষ পালন এবং বাংলাদেশে জাতির জনকের জন্মবর্ষ পালনের এক বিরাট পার্থক্যের কথাটাই আজ এই লেখায় উল্লেখ করছি।

পার্থক্যটা হল, ভারতে মহাত্মার সার্ধশত জন্মবর্ষ পালনে বিজেপির মতো দলও আজ যুক্ত। কিন্তু আগামী বছর বাংলাদেশে জাতির জনকের জন্মশতবার্ষিকী পালনের বিরাট আয়োজনে দেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি এবং তার সহযোগী দলগুলো যোগ দিতে এগিয়ে আসেনি।
ভারতের বিজেপির সাবেক এক সদস্য যেমন গান্ধীজিকে হত্যা করেছে, তেমনি বাংলাদেশের বর্তমান বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা নেতা ও তার সহচররা জাতির জনককে হত্যা করেছিলেন। ভারতের বিজেপি জাতির জনককে হত্যার কলঙ্ক মোচন করতে চাইছে, বাংলাদেশের বিএনপি এই কলঙ্ক থেকে মুক্ত হতে চাইছে না। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী পালনে বাংলাদেশ সরকার তো বিশাল আয়োজন করেছেই, দেশে এবং বিদেশেও বেসরকারিভাবে বিরাট আয়োজন চলছে। দেশে দল-মত নির্বিশেষে শিল্প, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ জাতির জনকের জন্মদিবস পালনে তৎপর হয়েছে।

তৎপর হয়নি বিএনপি এবং তার সমমনা দলগুলো। তার মধ্যে আছে ড. কামাল হোসেনের গণফোরামও। এরা বলতে পারেন, আওয়ামী লীগ সরকার তো বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের আয়োজনে যোগ দিতে আমাদের আমন্ত্রণ জানায়নি। হয়তো তারা আগামী বছর এই উৎসবে যোগ দিতে আমন্ত্রণ পাবেন। তবে আওয়ামী লীগের উচিত ছিল আগামী বছরের এই উৎসব পালনের জন্য বর্তমান বছরেও যে বিশাল তৎপরতা চলছে, তাতেও অংশ নিতে বিএনপি, গণফোরামসহ বিরোধী সব দলের নেতাদের আমন্ত্রণ জানানো। যদি তারা না আসেন, তা অন্য কথা। কিন্তু এখানে আরেকটি কথা আছে। ভারতে মহাত্মা গান্ধীর নিজস্ব দল কংগ্রেস। এই কংগ্রেস গান্ধীর সার্ধশত জন্মবর্ষ পালনে তাদের আয়োজনে বিজেপিকে ডাকেনি। কিন্তু বিজেপি নিজেদের উদ্যোগেই, এমনকি সরকারিভাবেও এই দিবসটি পালন করেছে।

কারণ, তারা উপলব্ধি করেছেন গান্ধী এখন আর শুধু কংগ্রেসের নেতা নন, তিনি জাতির নেতা এবং পিতা। বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবও এখন শুধু আওয়ামী লীগের নেতা নন, তিনি জাতীয় নেতা, জাতির পিতা। এই সত্যটি আজ পর্যন্ত বিএনপি অস্বীকার করে চলেছে বলেই জাতীয় রাজনীতিতে আজ এত ধোঁয়াশা ও বিভাজন। বিস্ময়ের কথা, ড. কামাল হোসেন তো এখনও নিজেকে বঙ্গবন্ধুর বিশ্বস্ত অনুসারী বলে দাবি করেন। তাহলে তিনি এবং তার দল কেন জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী পালনের আয়োজনে নিজেরাও দলীয়ভাবে তৎপরতা দেখাচ্ছেন না। বিএনপির বর্তমানে যে অবস্থা, তাতে তার নেতাকর্মীদের মধ্যে আত্মসমীক্ষা ও আত্মশুদ্ধি প্রয়োজন, নইলে দলটি অস্তিত্ব হারাবে। তারা তাদের আওয়ামী লীগের বিরোধিতার নীতি অব্যাহত রাখুন; কিন্তু বঙ্গবন্ধু যে জাতির পিতা এই ঐতিহাসিক সত্য ও বাস্তবতাকে মেনে নিয়ে ভারতের বিজেপির মতো রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও দূরদৃষ্টির পরিচয় দিলে শুধু তারা রক্ষা পাবেন না, জাতীয় রাজনীতির অনৈক্য, সংঘর্ষ ও সংকট অনেকটা দূর হয়ে একটি সুদৃঢ় গণতান্ত্রিক কাঠামো গড়ে উঠতে পারে।
এই সমঝোতা দেশের বর্তমান সংকটে একান্ত প্রয়োজন, আর এটা হতে পারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে স্মরণ এবং তাকে কেন্দ্র করেই। আওয়ামী লীগকেও অনুরোধ জানাই তারা বঙ্গবন্ধুকে দলীয় নেতা করে না রেখে, নির্বাচনে দলীয় প্রতীক হিসেবে ব্যবহার না করে, দল-মত নির্বিশেষে সব বাঙালির নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে আসুন।


সর্বশেষ সংবাদ
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
প্রতিষ্ঠাতা বীর মুক্তিযোদ্ধা জয়নাল হাজারী।   ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: গোলাম কিবরীয়া হাজারী বিটু্।   প্রকাশক: মোঃ ইব্রাহিম পাটোয়ারী।
সহ সম্পাদক- রুবেল হাসান: ০১৮৩২৯৯২৪১২।  বার্তা সম্পাদক : জসীম উদ্দিন : ০১৭২৪১২৭৫১৬।  সার্কুলেশন ম্যানেজার : আরিফ হোসেন জয়, মোবাইল ঃ ০১৮৪০০৯৮৫২১।  রিপোর্টার: ইফাত হোসেন চৌধুরী: ০১৬৭৭১৫০২৮৭।  রিপোর্টার: নাসির উদ্দিন হাজারী পিটু: ০১৯৭৮৭৬৯৭৪৭।  মফস্বল সম্পাদক: রাসেল: মোবা:০১৭১১০৩২২৪৭   প্রকাশক কর্তৃক ফ্ল্যাট নং- এস-১, জেএমসি টাওয়ার, বাড়ি নং-১৮, রোড নং-১৩ (নতুন), সোবহানবাগ, ধানমন্ডি, ঢাকা থেকে প্রকাশিত এবং সিটি প্রেস, ইত্তেফাক ভবন, ১/আর কে মিশন রোড, ঢাকা-১২০৩ থেকে মুদ্রিত।  বার্তা, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ০২-৪১০২০০৬৪।  ই-মেইল : [email protected], web : www.hazarikapratidin.com
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা বা ছবি অনুমতি ছাড়া নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি