শিরোনাম: |
ব্যাংকে সমস্যা সমাধানে অনিয়ম!
|
স্টাফ রিপোর্টার॥ বিপর্যয়ের হাত থেকে ব্যাংকিং খাতকে উদ্ধারে কেন্দ্রীয় ব্যাংক নানা পদক্ষেপ নিলেও আশানুরূপ ফল পাওয়া যাচ্ছে না। ব্যাংকিং খাতের এক-চতুর্থাংশের বেশি সংখ্যক ব্যাংক ন্যূনতম মূলধন সংরক্ষণে ব্যর্থ হয়েছে। এর মধ্যে ৭টি সরকারি, ৪টি বেসরকারি এবং ১টি বিদেশি ব্যাংক রয়েছে। কেন এই পরিস্থিতি?
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, বিদায়ী বছরের সেপ্টেম্বর শেষে ১২টি ব্যাংকের মূলধন ঘাটতির পরিমাণ ১৭ হাজার ৬৬০ কোটি টাকা, যা আগের প্রান্তিকের তুলনায় ১ হাজার ৫১১ কোটি টাকা বেশি। অর্থাৎ গত বছরের জুন শেষে এসব ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি ছিল ১৬ হাজার ১৪৯ কোটি টাকা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অনিয়ম, দুর্নীতি আর নানা অব্যবস্থাপনায় ব্যাংক খাতে চলছে একধরনের স্বেচ্ছাচারিতা। যাচাই-বাছাই না করে ভুয়া প্রতিষ্ঠানে ঋণ দেয়া হয়েছে, যা পরবর্তী সময়ে খেলাপি হয়ে পড়ছে। এসব ঋণের বিপরীতে নিরাপত্তা সঞ্চিতি বা প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হচ্ছে ব্যাংকগুলোকে। বাড়তি অর্থ জোগাতে হাত দিতে হচ্ছে মূলধনে। ফলে সৃষ্টি হচ্ছে সংকট। সম্প্রতি একটি ব্যাংক থেকে একজন প্রভাবশালী গ্রাহককে ১২শ কোটি টাকা ঋণ দেওয়ার পর গ্রাহক আর তা ফেরত দিতে পারবেন না বলে জানিয়ে দেন। তখন ওই অর্থ হয়ে গেল ব্যাংকের খেলাপি ঋণ। পরে ওই ব্যাংক এই ঋণকে কাগজে না দেখিয়ে উল্টো বিশেষ সুবিধা হিসেবে পুনঃতফসিল করে দিচ্ছে। অর্থাৎ, যখনই এ ধরনের সমস্যা দেখা যায় প্রায় ক্ষেত্রেই অনিয়মের মধ্য দিয়ে একটা সমাধান টানা হয়। যার ফলে ব্যাংক পিছিয়ে যায়। এতে নানা সংকট দেখা দেয়। ঋণ নেওয়ার সময় ওই গ্রাহকের ৮শ কোটি টাকার সম্পদ দেখানো হয়েছে। ঋণের অর্থ ফেরত না পেয়ে ব্যাংক তখন ওই টাকার সঙ্গে আরো ৪শ কোটি টাকা যোগ করে (প্রভিশন হিসেবে রেখে) ১২শ কোটি টাকা হিসেব করে সেখান থেকে অর্ধেক দিচ্ছে সরকারকে ট্যাক্স হিসেবে। আর বাকি অর্থ পরিশোধিত মূলধন হিসেবে, নিজেদের কাছে রাখছে ব্যাংক। মাঝখানে আমানতকারী পুরোপুরি বঞ্চিত। আর্থিক খাত সংশ্লিষ্টরা এমন পরিস্থিতিকে এই মুহূর্তে দুর্বল ব্যাংক ব্যবস্থাপনার ভয়াবহ চিত্র বলছেন। তাদের মতে, এভাবে টাকা বের হয়ে যাওয়ায় একের পর এক দুর্বল হয়ে যাচ্ছে ব্যাংকগুলো। আমানতকারীরা ঝুঁকিতে পড়ছেন। অন্যদিকে সরকার ছয় মাসের মাথায় ব্যাংক থেকে লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি ঋণ নিয়েছে। বাজেট ঘাটতি মেটাতে প্রতিবছরের বাজেটে অভ্যন্তরীণ খাত থেকে ঋণের ব্যবস্থা রাখে সরকার। এর মধ্যে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকেই নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা থাকে সবচেয়ে বেশি। কিন্তু এই অর্থবছরের মাত্র ৬ মাসের মাথায় পুরো ঋণ নিয়ে ফেলেছে সরকারের। ৪৭ হাজার ৩৬৩ কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রার জায়গায় দুদিন আগে সরকারের ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ৪৯ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। ব্যাংক সেক্টরে ব্যাপক গুঞ্জন আছে, ব্যাংক মালিক বা পরিচালনা বোর্ডের সঙ্গে বড় ব্যবসায়ীদের ভাল সম্পর্কের কারণে বড় অংকের ঋণ নেওয়া সহজ হয়। এসব ব্যবসায়ীরা একদিকে ঋণ খেলাপী হন। অন্যদিকে, ব্যাংকের সাহায্যই আমদানি বা রফতানির মাধ্যমে বিদেশে পাচার হচ্ছে টাকা। ২০১৮ সালে হোটেল সোনারগাঁওয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক, ব্যাংক মালিক, ব্যবসায়ী, সরকারের সঙ্গে বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছিল সুদের হার এক অংকে আনার। সম্প্রতি আবারও অর্থমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছেন আসছে এপ্রিল থেকে ব্যাংকের সুদের হার এক অংকে আনা হবে। কিন্তু এখনো পর্যন্ত এ নিয়ে ব্যাংক পাড়ায় কোনো তোড়জোড় নেই। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকেও কিছু বলা হয়নি। অথচ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সুদের হারের কথা বলে উল্টো সরকারের কাছ থেকে সুবিধা নিয়েছেন ব্যাংক মালিকরা। এসব বিষয়ে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, এ বিষয়ে রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও সুশাসন যদি এক সঙ্গে কাজ করতে পারে তাহলেই ব্যাংক সেক্টরকে টেনে তোলা সম্ভব। অন্যথায় নয়। |