বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, 2০২4
৯০ বছরে ব্যবসা শুরু এখন খ্যাতির শীর্ষে
Published : Monday, 20 January, 2020 at 8:39 PM

 আন্তর্জাতিক ডেস্ক ॥
একদিন মেয়ে রাভিনা সুরির সঙ্গে গল্প করছিলেন হরভজন কৌর। কথায় কথায় রাভিনা মায়ের কাছে জানতে চান, তার কোনো অপূর্ণ সাধ রয়েছে কিনা। জবাবে ৯০ বছর বয়সী হরভজন বলেন, ‘আমার জীবন পরিপূর্ণ। কিন্তু একটাই আফসোস, সারাজীবনে কখনো নিজে আয় করিনি। ইশ, যদি করতে পারতাম!
এই আলাপ সেদিনের মতো শেষ হলেও বিষয়টি মনে গেঁথে গিয়েছিল রাভিনার। ভাবছিলেন কি করা যায়? শেষপর্যন্ত মায়ের ইচ্ছাপূরণে মোটামুটি সহজ পথই খুঁজে বের করেন তিনি। ছোটবেলা থেকেই যেসব খাবার খেতে খেতে তারা বড় হয়েছেন, সেগুলো নিয়েই নতুন ব্যবসা শুরু করতে মাকে উদ্বুদ্ধ করেন রাভিনা সুরি। সেই থেকেই নিজের তৈরি হালুয়া বিক্রি শুরু করেন হরভজন, যার খ্যাতি এখন পুরো ভারতজুড়ে। চার বছর আগে পাঞ্জাবের রাজধানী চণ্ডীগড়ে এভাবেই শুরু হয়েছিল এক নতুন অধ্যায়। রাভিনা বলেন, ‘আমরা সারাজীবন বাড়ির মিষ্টি, তরকারি, শরবত খেয়েছি। তিনি (হারভজন) সবসময়ই চমৎকার রাঁধুনী, কিন্তু বরাবরই পর্দার আড়ালে থেকে যাচ্ছিলেন।’ সবাই মুখে মুখে হরভজন কৌরের রান্নার প্রশংসা করলেও এর জন্য কখনোই কোনো আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি মেলেনি। মেয়ের মতে, ‘ওই প্রজন্মের অন্য মায়েদের মতো তিনিও আমাদের জন্য নিরলস কাজ করে গেছেন।’ মায়ের হালুয়া বিক্রি শুরুর ঘটনা প্রসঙ্গে রাভিনা বলেন, ‘মা প্রথমে স্থানীয় কাঁচাবাজারে নিজেই একটি দোকান দেন। তিনি সেখানে বসে থাকলেন, ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বললেন, তারপর দুই হাজার রুপি নিয়ে বাড়িতে ফিরলেন। ওটাই ছিল তার প্রথম নিজের উপার্জন।’ অত্যন্ত লাজুক এক গৃহিণীর জন্য এভাবে বাড়ির বাইরে গিয়ে উপার্জন করা অনেক বড় একটি অর্জন ছিল বলে মনে করেন রাভিনা। নিজের প্রথম আয় দুই হাজার রুপি নিয়ে গর্বের সঙ্গেই বাসায় ফেরেন ৯০ বছর বয়সী হারভজন। তবে টাকা আয় করাই তার খুশির একমাত্র কারণ ছিল না, বরং এই উদ্যোগকে সামনে এগিয়ে নেয়া, এ থেকে আরও কিছু করার আত্মবিশ্বাস এসে গিয়েছিল তার মধ্যে। এরপর থেকেই প্রতি ১০ দিন পরপর নিজের হাতে তৈরি হালুয়া, চাটনি, বিভিন্ন ধরনের আচার নিয়ে বাজারে যেতে শুরু করেন হারভজন। এত বয়স হওয়া সত্ত্বেও নিয়মিত কাজ চালিয়ে যান তিনি। পরিশ্রমের বিষয়টিকে রীতিমতো উপভোগ করতে শুরু করেন এই বৃদ্ধা। ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে তার ব্যবসা, আসতে থাকে নিত্যনতুন অর্ডার। তবে এর কারণে যেন অতিরিক্ত পরিশ্রম না হয়ে যায়, সেদিকেও খেয়াল রাখতে হতো। এসব কাজে পেছন থেকে মেয়ে রাভিনা কলকাঠি নাড়লেও হরভজনের আরও একজন ‘পার্টনার’ ছিলেন, তার নাতনি। তিনিই নানির হাতে তৈরি খাবারগুলোর প্যাকেট করা ও ব্র্যান্ডিংয়ের কাজ করে দেন। তার পছন্দ করা ট্যাগলাইনও ছিল চমৎকার – ‘বাচপান ইয়াদ আয়েগি’ অর্থাৎ ছোটবেলার কথা মনে পড়ে যাবে।
পরিবারের সদস্যদের এমন মিষ্টি-মধুর সম্পর্কের বিষয়ে রাভিনা বলেন, ‘দুই মাস আগে আমার মেয়ের বিয়ে হয়েছে। সে চেয়েছিল বিয়ের দাওয়াতের সঙ্গে তার নানির হাতে তৈরি মিষ্টি পাঠানো হোক। সে বাজারের মিষ্টির বদলে নানির হাতের মিষ্টি চাচ্ছিল। এমন ‘ট্রিট’ পাওয়া ছিল সবার জন্যই অত্যন্ত আনন্দের বিষয়।’ নাতনির বিয়েতে হরভজন কৌর প্রায় দুইশ কেজি হালুয়া তৈরি করেছিলেন।
ব্যবসা বৃদ্ধির বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে রাভিনা বলেন, ‘অর্থের চেয়ে আরেকটা বিষয় হচ্ছে মা এখন অনেক আত্মবিশ্বাসী, এটাকেই আমি প্রবৃদ্ধি হিসেবে দেখি। সেই মানুষটা যিনি কিনা লজ্জার কারণে দলের মধ্যেই বসতেন না, এখন সাক্ষাৎকার দিচ্ছেন, ক্রেতাদের সঙ্গে প্রতিক্রিয়া জানতে কথা বলছেনৃ এগুলো তার জীবনটাই বদলে দিয়েছে।’
কিছুদিন পরপর হরভজন কৌর ৫ থেকে ১০ কেজি হালুয়া নিয়ে বাজারে যান। এই ব্যবসা আরও বাড়ানোর পরিকল্পনা আছে কিনা জানতে চাইলে তার মেয়ে রাভিনা বলেন, ‘সময় হলে দেখা যাবে। আপাতত মা আর আমরা এই সুনাম-খ্যাতি উপভোগ করি।’
গত চার বছর ধরে অন্তত পাঁচশ কেজি হালুয়া তৈরি করেছেন ৯৪ বছর বয়সী হরভজন কৌর, এর প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে ৮৫০ রুপিতে। ইতিমধ্যে তাদের হালুয়ার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছে ভারতের আনাচে-কানাচে। প্রশংসাবাণী আসছে নামী-দামী মানুষদের কাছ থেকেও।
মাহিন্দ্র গ্রুপের চেয়ারম্যান আনন্দ মাহিন্দ্র এক টুইটে হরভজন কৌরকে ‘বর্ষসেরা উদ্যোক্তা’ খেতাব দিয়েছেন। তার হাতের হালুয়া খেতে চেয়েছেন পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী অমরিন্দর সিংও। ফলে পারিবারিক ব্যবসা হলেও ক্রমাগত ফোনকলের কারণে এখন নতুন কর্মী নিয়োগের পরিকল্পনা করতে হচ্ছে রাভিনা-হরভজনদের।


সর্বশেষ সংবাদ
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
প্রতিষ্ঠাতা বীর মুক্তিযোদ্ধা জয়নাল হাজারী।   ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: গোলাম কিবরীয়া হাজারী বিটু্।   প্রকাশক: মোঃ ইব্রাহিম পাটোয়ারী।
সহ সম্পাদক- রুবেল হাসান: ০১৮৩২৯৯২৪১২।  বার্তা সম্পাদক : জসীম উদ্দিন : ০১৭২৪১২৭৫১৬।  সার্কুলেশন ম্যানেজার : আরিফ হোসেন জয়, মোবাইল ঃ ০১৮৪০০৯৮৫২১।  রিপোর্টার: ইফাত হোসেন চৌধুরী: ০১৬৭৭১৫০২৮৭।  রিপোর্টার: নাসির উদ্দিন হাজারী পিটু: ০১৯৭৮৭৬৯৭৪৭।  মফস্বল সম্পাদক: রাসেল: মোবা:০১৭১১০৩২২৪৭   প্রকাশক কর্তৃক ফ্ল্যাট নং- এস-১, জেএমসি টাওয়ার, বাড়ি নং-১৮, রোড নং-১৩ (নতুন), সোবহানবাগ, ধানমন্ডি, ঢাকা থেকে প্রকাশিত এবং সিটি প্রেস, ইত্তেফাক ভবন, ১/আর কে মিশন রোড, ঢাকা-১২০৩ থেকে মুদ্রিত।  বার্তা, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ০২-৪১০২০০৬৪।  ই-মেইল : [email protected], web : www.hazarikapratidin.com
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা বা ছবি অনুমতি ছাড়া নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি