শুক্রবার, ২৯ মার্চ, 2০২4
দিল্লিতে সহিংসতা: লোটাকম্বল নিয়ে পালাচ্ছেন মুসলিমরা
Published : Thursday, 27 February, 2020 at 9:37 PM

আন্তর্জাতিক ডেস্ক ॥
খাজুরি খাসের চার নম্বর গলির মুখটায় দাঁড়িয়ে কাঁদছিলেন ৬৫ বছর বয়সী মোহাম্মদ তাহির। কাঁদছিলেন পাশে দাঁড়ানো তাঁর দুই পুত্রবধূও। গলির মুখ থেকে তাঁদের বাড়িটা ছিল খান চার-পাঁচেক বাড়ির পরেই। হ্যাঁ, ছিল। এখন গোটা বাড়িটাই ছাই হয়ে গেছে। গত মঙ্গলবার গভীর রাতে ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি দিতে দিতে হাজারখানেক যুবক ঢুকেছিল তাহিরদের গলিতে। তাদের হাতে ছিল বন্দুক, ধারালো অস্ত্রশস্ত্র। গলিতে ঢুকেই তারা মারধর শুরু করল সেখানকার বাসিন্দাদের। ঘরে ঘরে ঢুকে শুরু করল লুঠপাট। তার পর একটা একটা করে বাড়িতে আগুন লাগাতে থাকল। লোকজন যে বাড়িগুলির ভেতরে রয়েছেন, তার পরোয়াই করল না। বাড়ি দাউদাউ করে জ্বলছে দেখে প্রাণে বাঁচতে আর কয়েক জন পড়শির মতো তাহিরও তাঁর পরিবারের লোকজনকে নিয়ে উঠে যান ছাদে। তার পর এক এক করে সেই ছাদ থেকে পাশের বাড়ির ছাদে ঝাঁপ দেন। সেই বাড়ির ছাদ থেকে তার পরের বাড়ির ছাদে। এই ভাবে ছাদ টপকে টপকে তাহিরার পৌঁছে যান গলির শেষ প্রান্তে। যেখানে তখনও পৌঁছয়নি হানাদাররা। পালিয়ে প্রাণে বাঁচতে পেরেছিলেন তাহিররা। কিন্তু বাড়ির মোহ আর ছাড়তে পারেন কী ভাবে? অনেক কষ্টে যে বানিয়েছিলেন বাড়িটা। তাই বুধবার বিকেলে দুই পুত্রবধূকে নিয়ে বাড়িটা দেখতে এসেছিলেন তাহির।

গিয়ে দেখেন, গোটা বাড়িটাই ছাই হয়ে রয়েছে। পাশের বাড়িটারও একই দশা। তার পরেরটাও...। সেটা দেখার পর আর চোখের জল চেপে রাখতে পারেননি তাঁরা। গলির মুখে এসে কাঁদতে কাঁদতে বার বার পেছেনে ফিরে ছাই হয়ে যাওয়া বাড়িটার দিকে তাকাচ্ছিলেন। আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারেননি। দুই পুত্রবধূকে নিয়ে চার নম্বর গলির মুখেই বসে পড়েছিলেন তাহির। ফুঁপিয়ে কাঁদতে কাঁদতে তাহির বললেন, ‘‘ওরা বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দিল। আমরা পড়িমড়ি করে বাড়ি ছেড়ে পালাতে শুরু করলাম। কোমর থেকে পঙ্গু আমার বউ। ও পারল না। আমার দুই ছেলেও গুরুতর জখম হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় কিছুই আমরা দাঁতে কাটিনি। আমার সদ্যোজাত নাতিনাতনিরা জল খেয়ে রয়েছে।’’
অগ্নিসংযোগের হাত থেকে রেহাই পায়নি গলির হিন্দু বাসিন্দাদের ঘরবাড়ি। খাজুরি খাসের চার নম্বর গলিতে যত মুসলিম পরিবার থাকতেন, মঙ্গলবার গভীর রাতের ভয়াবহ ঘটনার পর তাঁরা সকলেই সেখান থেকে অন্যত্র পালিয়ে গেছেন। একই চেহারা মৌজপুর বাবরপুর ও ভাগীরথী বিহারের গলিগুলির। কোনও মুসলিম পরিবার আর সেখানে নেই।

এই কাহিনী শুধু খাজুরি খাসের নয়। মৌজপুর বাবরপুর, ভাগীরথী বিহার, সর্বত্রই ছবিটা এক। গাড়ি নিয়ে সব্জি বেচেন বছরকুড়ির মোহাম্মদ এফাজ, খাজুরি খাসের চার নম্বর গলির মুখে দাঁড়িয়ে বললেন, ‘‘এমন ভয়াবহ ঘটনা এর আগে দেখিনি। ওদের সকলের হাতে ছিল বন্দুক, লাঠি, ধারালো অস্ত্রশস্ত্র। ওরা ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি দিচ্ছিল। ওই ধ্বনি দিতে দিতেই গলির একের পর এক ঘরবাড়িতে ওরা আগুন লাগাতে শুরু করল। গুলি চালাচ্ছিল এলোপাথাড়ি।’’ তাঁর আড়াই মাসের মেয়েকে লক্ষ্য করেও দুষ্কৃতীরা ইট, পাথর ছুড়েছিল, জানালেন খাজুরি খাসের আর এক বাসিন্দা সিতারা।

সিতারা বললেন, ‘‘ওই সময় নিজেকে দিয়ে আমার বাচ্চাটাকে আড়াল করেছিলাম। বাঁচিয়েছি ঠিকই, কিন্তু এখন ভাবছি, ওকে কী খাওয়াব, পরাব?’’
খাজুরি খাসের চার নম্বর গলির হিন্দু বাসিন্দারা কিন্তু ওই সময় তাঁদের মুসলিম পড়শিদের বাঁচানোর চেষ্টা করেছিলেন। মুসলিমদের ঘরবাড়িগুলি যখন পুড়ছে, তখন তাঁরা নিজেদের বাড়ি থেকে বালতির পর বালতি জল ঢেলে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেছিলেন। পারেননি, জানালেন চার নম্বর গলির এক হিন্দু বাসিন্দা। যিনি কিছুতেই তাঁর নাম জানাতে চাইলেন না। ভয়ে, যদি এর পর তাঁর উপরেও চড়াও হয় দুষ্কৃতীরা।
গলিতেই থাকতেন দিনমজুর মহম্মদ আরিফ। বিজয় পার্ক এলাকায় দিনদু’য়েক আগে একটি কাজ পেয়েছিলেন আরিফ। জানালেন, এই ঘটনার পর তিনি প্রাণে বাঁচতে সম্ভলে চলে যাচ্ছেন। সব কিছু ছেড়েছুড়ে। গলিতে গলিতে ঢুঁ মেরে দেখা গেল, গত রবিবার থেকে টানা হিংসার ঘটনার পর খাজুরি খাস, মৌজপুর বাবরপুর, ভাগীরথী বিহারের মুসলিম এলাকাগুলি খাঁ খাঁ করছে। বাড়িগুলি ছাই, তাই আক্ষরিক অর্থেই, শ্মশানের চেহারা নিয়েছে এলাকাগুলি।-আনন্দবাজার


সর্বশেষ সংবাদ
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
প্রতিষ্ঠাতা বীর মুক্তিযোদ্ধা জয়নাল হাজারী।   ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: গোলাম কিবরীয়া হাজারী বিটু্।   প্রকাশক: মোঃ ইব্রাহিম পাটোয়ারী।
সহ সম্পাদক- রুবেল হাসান: ০১৮৩২৯৯২৪১২।  বার্তা সম্পাদক : জসীম উদ্দিন : ০১৭২৪১২৭৫১৬।  সার্কুলেশন ম্যানেজার : আরিফ হোসেন জয়, মোবাইল ঃ ০১৮৪০০৯৮৫২১।  রিপোর্টার: ইফাত হোসেন চৌধুরী: ০১৬৭৭১৫০২৮৭।  রিপোর্টার: নাসির উদ্দিন হাজারী পিটু: ০১৯৭৮৭৬৯৭৪৭।  মফস্বল সম্পাদক: রাসেল: মোবা:০১৭১১০৩২২৪৭   প্রকাশক কর্তৃক ফ্ল্যাট নং- এস-১, জেএমসি টাওয়ার, বাড়ি নং-১৮, রোড নং-১৩ (নতুন), সোবহানবাগ, ধানমন্ডি, ঢাকা থেকে প্রকাশিত এবং সিটি প্রেস, ইত্তেফাক ভবন, ১/আর কে মিশন রোড, ঢাকা-১২০৩ থেকে মুদ্রিত।  বার্তা, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ০২-৪১০২০০৬৪।  ই-মেইল : [email protected], web : www.hazarikapratidin.com
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা বা ছবি অনুমতি ছাড়া নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি