শিরোনাম: |
রক্তাক্ত দিল্লির নায়ক নীরাজ কুমার
হাজারিকা অনলাইন ডেস্ক
|
দিল্লিতে টানা কয়েকদিনের সহিংসতায় এ পর্যন্ত ৪৩জনের মারা যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। যাদের অধিকাংশই মুসলমান। ব্যাপক পুলিশ ও আধা সামরিক বাহিনী মোতায়েনের কারণে দিল্লির অবস্থা এখন থমথমে। শুক্রবার সকাল থেকে কিছু এলাকায় ১৪৪ ধারা তুলে নেওয়া হয়। কিন্তু মৃতের সংখ্যা বেড়েছে আজও। আহত হয়েছেন আরো দুই শতাধিক। এখন পর্যন্ত গ্রেফতার করা হয়েছে ৫১৪ জনকে। উত্তর-পূর্ব দিল্লির অনেক এলাকায় মুসলমানদের বাড়ি-ঘর আগুনে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। প্রাণ বাঁচাতে বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে আশ্রয় নিয়েছন মুসলমানরা। মূলত ধর্মের কারণে যে এমন সহিংসতা হচ্ছে তা একবাক্যে শিকার করছেন সবাই।
তবে, সাম্প্রদায়িকতার দেয়াল ভেঙে, নিজের জীবন বাজি রেখে কেউ কেউ বুক চিতিয়ে লড়াই করেছেন। তেমনই একজন গাজিয়াবাদের পুলিশ সুপার নীরাজ কুমার জাদন। দিল্লির কারাওয়াল নগরের অনেক পরিবারকে বাঁচিয়েছে তার সিদ্ধান্ত। তার প্রশংসা করা হচ্ছে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে। বিবিসির প্রতিবেদনে তাকে ‘হিরো’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নীরাজ কুমার গত ২৫ ফেব্রুয়ারি উত্তরপ্রদেশের কাছেই গাজিয়াবাদের একটি সীমান্তে টহল দিচ্ছিলেন। এসময় তিনি দিল্লির কারাওয়াল নগর এলাকা থেকে গোলাগুলির শব্দ শুনতে পান। ওই এলাকাটি তার অবস্থান থেকে ২০০ মিটার দূরে ছিল। তিনি দেখলেন, ৪০-৫০ জন মানুষ যানবাহনে আগুন দিচ্ছে। উগ্র জনতার একজন পেট্রোল বোমা নিয়ে একটি বাড়িতে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। ঠিক তখনই নীরাজ কুমার সিদ্ধান্ত নিলেন সীমান্ত পার হওয়ার। কিন্তু, পুলিশ প্রটোকল ভেঙে রাজ্য সীমান্ত পার হতে সুস্পষ্ট অনুমতির প্রয়োজন। নীরাজ কুমার বিবিসিকে বলেন, ‘আমি সীমান্ত পার হওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। আমি জানতাম আমার সামনে বিপদ এবং যা করছি তার এখতিয়ার আমার নেই। তবুও, সিদ্ধান্তে অটল ছিলাম। আর ওই ১৫ সেকেন্ড ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে ভয়াবহ সময়।’ তিনি আরো বলেন, ‘আমার দল আমাকে অনুসরণ করেছিল। সিনিয়ররাও আমাকে সমর্থন দিয়েছিল। এজন্য সবাইকে আমার ধন্যবাদ।’ সেখানে অগ্নিসংযোগের জন্য প্রস্তুত ছিল উগ্র জনতা। খুব বিপজ্জনক অবস্থার মধ্যে ছিলেন নীরাজ কুমার ও তার সহকর্মীরা। পুলিশ উগ্র জনতার সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করে। কিন্তু, আলোচনার চেষ্টা ব্যর্থ হয়। ‘আমরা তাদের বললাম, পুলিশ গুলি চালাবে। এ কথা শুনে তারা পিছু হটে। কিন্তু, কয়েক সেকেন্ড পরেই তারা আমাদের দিকে পাথর ছুঁড়ে মারে। আমরা তখন গুলির শব্দও পেলাম’, বলেন নীরাজ কুমার। নীরাজ কুমার এবং তার দল তাদের অবস্থান ধরে রাখেন এবং উগ্র জনতাকে ফিরে যাওয়ার জন্য ক্রমাগত চাপ দিতে থাকেন। এক সময় তারা চলেও যায়। নীরাজ কুমার জানান, এ অঞ্চলে বাঁশ দিয়ে তৈরি অনেক দোকান ছিল। এখানে অগ্নিকাণ্ডের সুযোগ দিলে পুরো এলাকা পুড়ে যেত। সেক্ষেত্রে নিহতের সংখ্যা আরও বাড়ত। উগ্র জনতা পুলিশের দিকে পাথর ছুড়েছিল। তাদের গুলিবিদ্ধ হওয়ার আশঙ্কাও ছিল, তা সত্ত্বেও নীরাজ কুমার ও তার দলের সদস্যরা পিছু হটেননি। নীরাজ কুমার অবশ্য নিজেকে নায়ক হিসেবে ভাবতে চান না। তিনি মনে করেন এসব কাজ তার দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে। বিবিসিকে তিনি বলেন, ‘আমি নায়ক নই। আমি যেকোনো ভারতীয়কে রক্ষার শপথ নিয়েছি। আমি কেবল আমার সেই দায়িত্ব পালন করছি। আমার সামনে কেউ মারা যাবে, তা আমি হতে দেব না। আমরা তখন বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করার মতো অবস্থানে ছিলাম। আমরা সেটাই করেছি।” গত রোববার থেকে উত্তর-পূর্ব দিল্লির বিভিন্ন এলাকায় সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। দিল্লি পুলিশ তাদের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছেন বলে তখন জানায় ভারতের হাইকোর্ট। উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের মদদ দেয়ার অভিযোগ ওঠে পুলিশের বিরুদ্ধে। এরপর পরিস্থিতি সামাল দিতে মোদি সরকার দিল্লি পুলিশের একাধিক শীর্ষ কর্মকর্তাকে বদলি করেন। দায়িত্ব নিয়ে তাই দিল্লির নতুন পুলিশ কমিশনার ঘোষণা দিয়েছেন, অভিযুক্তদের দ্রুত চিহ্নিত করে তাদের শাস্তির আওতায় আনার ব্যবস্থা করা হবে৷ দশকের সবচেয়ে ন্যাক্কারজনক এই দাঙ্গার জন্য দায়ী করা হচ্ছে মোদি সরকারের হিন্দুত্ববাদী পদক্ষেপকে। এরমধ্যে এনআরসি, সিএএ এবং এনপিআর উল্লেখযোগ্য। |