শিরোনাম: |
ধন্যবাদ রব ভাই
|
জয়নাল হাজারী ॥
আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় আ.স.ম রব ছিলেন একজন সাহসী মুক্তিযোদ্ধা। তার আগে রব ছিলেন সফল ছাত্রনেতা। ডাকসুর ভিপিও ছিলেন। সুগঠিত করেছিলেন মুক্তিযোদ্ধাদের। ৭১ রের এপ্রিলে প্রথম দিকে আমার গুদামকোয়াটারের বাসায় কাজী জাফর, আ.স.ম রব, মাওলানা ওয়াইজউদ্দিন ও আমি বসে ছিলাম একটি বৈঠকে। সেদিনও রবের সাহসী ভূমিকায় আমি মুগ্ধ হয়েছিলাম। তারপরে আ.সম রব ৭১রের জুন মাসে এলেন বিলোনিয়ায় আমি ও আমাদের সাথে দেখা ও আলাপ-আলোচনার জন্য। সেদিনই তিনি আমাদের কয়েকজনকে মুক্তিযুদ্ধে পাঠাবার পাকাপাকি ব্যবস্থা করলেন। রব ভাই যে বছর নােয়াখালী জেলাছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন ঠিক তার পরের বছরই অর্থাৎ ১৯৬৮সালে আমি ছিলাম বৃহত্তর নােয়াখালী জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক। আমাদের ব্যাচটিকে বলা হলো সি. ইন. সি স্পেশাল ক্যাডেট। ট্রেনিং থেকে ফেরার পথে আগরতলার কাছে একটি জায়গায় আমরা কয়েকজন বিপদে পড়ে গেলাম। সেদিনও এই আ.স.ম রব এসে আমাদেরকে উদ্ধার করেন। তারপর মেলাঘর থেকে আমরা চলে এলাম পরশুরামের সুবার বাজার এলাকায়। সেই এলাকাতেই ডিসেম্বরের ৫তারিখ পর্যন্ত যুদ্ধে লিপ্ত ছিলাম। এখানে আমি নিজ দায়িত্বে একটি ট্রেনিং সেন্টার করেছিলাম। এখানেই পিন্টু হামদামরা ট্রেনিং নিয়েছিল। ৬ ডিসেম্বর আমার একশত সাথি বা মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে সুবার বাজার থেকে পায়ে হেটে ফেনীশহরে প্রবেশ করি। ঢুকতেই দেখি শহীদ মিনারে ইলিয়াসসহ তিন রাজাকারের লাশ ঝুলছে। স্বাধীনতার পরে আ.স.ম রবের সঙ্গে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলাম। রব ভাইয়েরা জাসদ করে ভিন্ন লাইনে চলে গেলেন। আমি বরাবরই বঙ্গবন্ধুর অনুসারী হিসেবেই পুরো রাজনৈতিক জীবনটা চালিয়ে এসেছি। বলা যায় স্বাধীনতার পরে রব ভাইদের সঙ্গে আমাদের কঠিন দূরত্ব হয়ে গেল। আসল কথা হচ্ছে যুদ্ধের সময় আমি আর রব ভাই একাত্ব ছিলাম। যুদ্ধের পরে আর কখনোই তেমনভাবে আমাদের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপিত হয়নি। এখন আবার যুদ্ধ শুরু হয়েছে করোনার বিরুদ্ধে। মনে হয় এবারের যুদ্ধেও আমরা এক সাথেই কাজ করবো এবং এই যুদ্ধেও জয়লাভ করবো। যুদ্ধের পরে কে কোথায় যাব জানি না। তবে যুদ্ধের সময় একসাথে থাকার ডাক দিয়েছেন রব ভাই। তার এই আহবানকে স্বাগত জানাই। অভিনন্দন জানাই অন্তরের অন্তস্থল থেকে। ১লা এপ্রিল রব ভাই বলেছেন সব ভেদাভেদ ভুলে এখনি ঐক্যবদ্ধ হবার সময়। এই বার্তাটি পাওয়ার পরপরই আমি তাকে টেলিফোন করেছিলাম। প্রথমে ওনার স্ত্রী, নাম বলার পরও আমাকে চিনতে পারেননি। তবে রবভাই খুব গুরুত্বসহকারে এবং আন্তরিকতা নিয়ে আমার সঙ্গে কথা বলেন। আমি ওনাকে বলেছিলাম আপনি আপনার অন্য নেতাদেরও আপনার মত করে কথা বলতে বলুন। আমি কামাল হোসেন ও বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নাম উল্লেখ করেছিলাম। স্বাধীনতা যুদ্ধে আমরা বিজয়ীর বেসে ফিরে এসেছিলাম। এখন দুজনারই বয়স ৭০ পেরিয়ে গেছে। তাই এই যুদ্ধের পরে আমরা জীবিত থাকবো কিনা জানি না। কারণ আমরাই করোনার প্রধান শত্রু। বাচা-মরা নিয়ে চিন্তা করার সময় নাই। যুদ্ধ যখন শুরু হয়ে গেছে তখন এই যুদ্ধেও রবভাই ও আমি একসাথেই থাকবো এই অঙ্গিকার করছি। |