শিরোনাম: |
জয়নাল হাজারী: রাজনীতির ব্যাড বয়?
হাজারিকা অনলাইন ডেস্ক
|
![]() এমন একটি পরিস্থিতি ১৯৭৫ পরবর্তী বাংলাদেশের রাজনীতিতে ছিল যে, সভা সমাবেশ মিছিলেও গুণ্ডা বাহিনী হামলা করতো, বাধা দিত। সেজন্য পাল্টা গুণ্ডা বাহিনী রেখে সেই সমাবেশ করতে হতো অনেক ক্ষেত্রেই। এ কারণেই পঁচাত্তর পরবর্তী রাজনীতিতে আওয়ামী লীগের মতো একটি গণতান্ত্রিক এবং জননির্ভর রাজনৈতিক দলেও অনুপ্রবেশ ঘটে সন্ত্রাসের। মাঠ দখলের জন্য তারা দলে অপরিহার্য হয়ে ওঠেন। এই সময়ে লিয়াকত, হান্নান, আওড়ঙ্গের মতো নেতারা আওয়ামী লীগের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য কাজ করেছিলেন। কিন্তু আওয়ামী লীগ কখনই সন্ত্রাসনির্ভর রাজনৈতিক দল নয় এবং সন্ত্রাসের উপর নির্ভর করে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালানোর মতো আদর্শিক জায়গা আওয়ামী লীগে নেই। যার কারণে আস্তে আস্তে এ সমস্ত সন্ত্রাসীরা দল থেকে ঝরে পড়েন। যদিও সেই সময়ের প্রেক্ষিতে তাদের অবদান অস্বীকার করার কোনো কারণ নেই। সেই ধারাবাহিকতায় আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে অন্যতম ব্যাড বয় হলেন জয়নাল হাজারী। পঁচাত্তর পরবর্তী রাজনীতিতে আওয়ামী লীগকে প্রতিষ্ঠিত করা, বঙ্গবন্ধুর নাম উচ্চারণ করা এবং আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে অপপ্রচার বন্ধের ক্ষেত্রে স্থানীয় পর্যায়ে যারা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিলেন, তাদের মধ্যে ফেনীর জয়নাল হাজারী অন্যতম। হয়তো তার পদ্ধতি এবং প্রকাশ সবক্ষেত্রেই গ্রহণযোগ্য ছিল না, কিন্তু এভাবেই তিনি ফেনীর রাজনীতিতে আওয়ামী লীগকে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। তিনি ১৯৯৬ সালে নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পর ফেনীতে একটি হাজারী রাজত্ব কায়েম করেছিলেন বলেও অভিযোগ আছে। ফেনীর রাজনীতির একটি ঐতিহাসিক বাস্তবতা রয়েছে। বেগম খালেদা জিয়া বগুড়া কেন্দ্রীক রাজনীতির পাশাপাশি ফেনীর রাজনীতিতেও একটা প্রভাব রেখেছিলেন। তার পৈত্রিক নিবাস, এই বিবেচনায় তিনি ফেনীতে বিএনপির শক্ত ঘাঁটি গড়ে তোলার চেষ্টা করেছিলেন। এই সময়ে খালেদা জিয়াকে চ্যালেঞ্জ জানানোর মতো একমাত্র নেতা ছিলেন জয়নাল হাজারী। এই চ্যালেঞ্জ জানানোর যে পথ এবং পদ্ধতি যে সবসময় রাজনৈতিক ছিল, তাও নয়। এজন্য হয়তো হাজারী বাহিনী বা তার নিজস্ব ক্যাডার বাহিনী গড়ে তুলতে হয়েছিলো। যা বিভিন্ন সময় সমালোচিতও হয়েছিলো। আবার জয়নাল হাজারীর বিরুদ্ধে যে সমস্ত সমালোচনা, তার কতটুকু প্রচার এবং কতটুকু অপপ্রচার তা নিয়েও রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা রকম প্রশ্ন রয়েছে। কারণ ২০০১ সালে যখন একটি পরিকল্পিত এবং পাতানো নির্বাচনের ফাঁদে আওয়ামী লীগ পা দেয় তখন যে কয়েকটি ঘটনায় স্পষ্ট প্রতীয়মান হয় যে, আওয়ামী লীগকে হারানোর জন্যই এই নির্বাচন, তার মধ্যে প্রথমটি ছিলো একযোগে ১৩ সচিবের রদবদল। দ্বিতীয়টি ছিলো, জয়নাল হাজারীর বিরুদ্ধে অভিযান। সেই সময় জয়নাল হাজারী যিনি একজন আওয়ামী লীগের প্রার্থী তার বাড়িতে অভিযানের কি উদ্দেশ্য ছিলো সেটি রাজনৈতিক অঙ্গনে একটি বিরাট অমীমাংসিত প্রশ্ন। ওই অভিযানের পর তৎকালীন প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেছিলেন, দুর্বৃত্তরা সব পালিয়ে গেছে। অর্থাৎ সরাসরিভাবেই তৎকালীন তত্বাবধায়ক সরকার একটি অবস্থান নিয়েছিলো। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, জয়নাল হাজারীর বিরুদ্ধে পুলিশি অভিযান দিয়েই আওয়ামী লীগকে নির্বাচনের মাঠ থেকে প্রায় বের করে দেওয়া হয়েছিলো। ২০০১ এর পর থেকে জয়নাল হাজারীর রাজনৈতিক জীবনের সূর্য অস্তমিত হতে শুরু করে। এখন তিনি আর মূলধারার রাজনীতিতে নেই। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর আস্তে আস্তে দুর্বৃত্তায়ণ এবং সন্ত্রাসের চক্র থেকে বেরিয়ে একটা সুস্থ ধারার রাজনৈতিক পরিমণ্ডল তৈরীর চেষ্টা করছেন শেখ হাসিনা। কিন্তু রাজনীতিতে যে জঞ্জাল আবর্জনা, সেটি দূর করা এখনো পুরোপুরি সম্ভব হয়ে উঠেনি। কিন্তু যারা বিভিন্ন সময় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ঘটিয়েছিলো, তাদের দলের জন্য অনেক অবদান থাকলেও শেখ হাসিনা তাদেরকে দলে প্রশ্রয় দেননি। দলে কোন বড় পদ পদবিও দেননি। এটি শেখ হাসিনার সুস্থ ধারার রাজনীতিতে ফিরে আসার যে অদম্য স্পৃহা তার বহি:প্রকাশ বলেই মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। কিন্তু শেখ হাসিনা জানেন যে, জয়নাল হাজারীরা দলের জন্য কাজ করেছেন। দলের অস্তীত্ব রক্ষার ক্ষেত্রে তাদের যে ভূমিকা, সেই ভূমিকা অস্বীকার করা যাবে না। হয়তো অস্তীত্ব রক্ষার জন্য তারা যে কৌশল নিয়েছিলেন, সেই কৌশলে অনেক গলদ ছিলো। কিন্তু তাদের আকাঙ্খাকে সম্ভবত শেখ হাসিনা সবসময় শ্রদ্ধা করেন। এ কারণেই আবার অসুস্থ জয়নাল হাজারীকে তিনি ডেকে আনেন গণভবনে। তাকে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য করেছেন। তার চিকিৎসার জন্য অর্থও দিয়েছেন। আমাদের পঁচাত্তর পরবর্তী রাজনীতিতে যে কঠিন সময় ছিলো, সেই কঠিন সময়ে আদর্শ প্রতিষ্ঠা করাই যখন চ্যালেঞ্জ ছিলো- সেই চ্যালেঞ্জের নি:সন্দেহে অন্যতম যোদ্ধা জয়নাল হাজারী। তিনি হতে পারেন রাজনীতির দুষ্টু বালক। কিন্তু আদর্শের জন্য তাঁর যে আকুতি, সেটিকে শ্রদ্ধা জানাতেই হয়।"সূত্র বাংলা ইনসাইডার" |