শুক্রবার, ২৯ মার্চ, 2০২4
সীমান্তে গরু পাচারে জড়িত বিএসএফ
Published : Friday, 25 September, 2020 at 8:30 PM

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে গরু পাচারের সঙ্গে জড়িত বিএসএফ। সম্প্রতি এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য মিলেছে সিবিআইয়ের তদন্তে।
গরু পাচার নিয়ে ভারত বাংলাদেশ সীমান্ত মাঝে মাঝেই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। ‘পাচারকারী’, এই অভিযোগে বহু বাংলাদেশি নাগরিককে গুলি করে মেরেছে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিএসএফ। কিন্তু ভারতের কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার সাম্প্রতিক তদন্তে দেখা গেলো ভূত রয়েছে সর্ষেতেই। বিপুল পরিমাণ অর্থের বিনিময়ে বিএসএফ এবং শুল্ক বিভাগ গরু পাচারে সাহায্য করে।
কিছুদিন আগেই বিএসএফ বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছিল, ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে গরু পাচারের সঙ্গে জড়িত বাংলাদেশ সীমান্ত রক্ষী বাহিনী। বাংলাদেশ অবশ্য সেই অভিযোগ নাকচ করে পাল্টা ভারতের ওপর দোষ চাপিয়েছিল। সম্প্রতি সিবিআইয়ের এক তদন্তে চমকপ্রদ তথ্য উঠে এলো। বলা হচ্ছে, সীমান্তে বিএসএফ এবং শুল্ক বা কাস্টমস বিভাগের বহু অফিসার সরাসরি গরু পাচারের সঙ্গে জড়িত। বুধবার বিএসএফের এক অফিসারের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানাও জারি হয়েছে। বস্তুত, এর আগেও বিএসএফের অফিসারদের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ উঠেছে এবং তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
সিবিআই জানিয়েছে, অভিনব কায়দায় এই গরু পাচার চালানো হয়। নিয়ম অনুযায়ী বিএসএফকে সীমান্তে গরু ধরতেই হয়। খাতায় কলমে দেখাতে হয়, মাসে কতজন পাচারকারীকে তারা গ্রেপ্তার করেছে এবং কত সংখ্যক গরু উদ্ধার হয়েছে। বিএসএফ তা নিয়মিত করেও। খেলা শুরু হয় তার পরে। মালদা, মুর্শিদাবাদ সহ রাজ্যের বিভিন্ন সীমান্তে বিএসএফ বাজেয়াপ্ত গরুকে খাতায় কলমে বাছুর বানিয়ে দেয়। খাতায় বাছুর অথচ বাস্তবে পূর্ণ বয়স্ক গরুকে নিয়ে এরপর বাজারে যাওয়া হয়। সেখানে সেই গরুর বাছুর হিসেবে নিলাম হয়। অর্থাৎ, খুব কম টাকায় তা বিক্রি করা হয়। যারা সেই গরু কিনছে, তারা পাচারকারী। নিলাম এমন ভাবে করা হয়, যাতে পাচারে বাজেয়াপ্ত গরু ফের পাচারকারীর হাতেই পৌঁছয়। প্রতিটি নিলামে বিএসএফের অভিযুক্ত অফিসারদের দেওয়া হয় গরু পিছু দুই হাজার টাকা। শুল্ক বিভাগের অফিসারদের দেওয়া হয় ৫০০ টাকা। পাচারকারীরা ফের সেই গরু সীমান্তের অন্য পারে পৌঁছে দেয়। দ্বিতীয়বার তাদের গরু আর ধরা হয় না।
ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের ২,২১৬ কিলোমিটার সীমান্ত পাহারা দেয়ায় নিয়োজিত প্রায় ৩০ হাজার ভারতীয় সৈন্যকে নতুন দায়িত্ব দেয়া হয়েছে? সেটা হলো, ভারতীয় গরু যেন কোনোভাবেই বাংলাদেশে পৌঁছতে না পারে? ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বিএসএফ সদস্যদের এই নির্দেশ দেন যেন ‘বাংলাদেশের মানুষ গরুর মাংস খাওয়া ছেড়ে দেয়’?
দীর্ঘদিন ধরে এই প্রক্রিয়ায় মালদা-মুর্শিদাবাদ এবং উত্তর ২৪ পরগনার সীমান্তে পাচার চলছে বলে জানিয়েছে সিবিআই সূত্র। বস্তুত দিনকয়েক আগে রাজ্যের বেশ কিছু জায়গায় সিবিআই অফিসাররা রেড চালিয়েছে। ভিন রাজ্যেও কয়েকটি জায়গায় রেড করা হয়েছে। এফাইআর করা হয়েছে বিএসএফ এর এক অফিসার এবং বেশ কিছু গরু পাচারকারীর বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত বিএসএফ অফিসারের নাম সতীশ কুমার। তিনি বিএসএফ এর ৩৬ নম্বর ব্যাটেলিয়নের কমান্ডান্ট ছিলেন। তাঁর সল্টেলেকের বাড়ি সিল করে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়াও ভিন রাজ্যে তাঁর আরও বাড়ি আছে।
সূত্র জানাচ্ছে, মালদায় পোস্টেড হলেও মালদা মুর্শিদাবাদ অঞ্চলের দীর্ঘ সীমান্তে কাজ করেছেন সতীশ। এবং সেই সময়েই গরু পাচারের ঘটনার সঙ্গে তিনি যুক্ত হন। তাঁর ছেলেও একই কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বলে জানা গিয়েছে। সতীশের সঙ্গে বেশ কয়েকজন গরু পাচারকারীর বিরুদ্ধেও এফআইআর দায়ের করা হয়েছে। সিবিআই সূত্র জানাচ্ছে, ২০১৫ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে প্রায় ১৬ মাস সীমান্তে কাজ করেছিলেন সতীশ। সে সময় প্রায় ২০ হাজার গরু পাচারের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত ছিলেন তিনি। সেখান থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা উপার্জন করেছেন তিনি।
এর আগেও বিএসএফ এর এক অফিসারকে একই অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছিল। এখন তিনি জামিনে মুক্ত। তাঁর কাছ থেকেই সতীশের নাম পাওয়া যায় বলে জানা গিয়েছে। বিএসএফ এবং শুল্ক বিভাগের এমন আরও অফিসার সিবিআইয়ের নজরে আছে বলে শোনা যাচ্ছে।
এখানেই শেষ নয়। সম্প্রতি এনআইএ এবং সিবিআইয়ের সূত্রের থেকে জানা গিয়েছে, গরু পাচারের সঙ্গে আরও ভয়াবহ লেনদেনের ঘটনাও ঘটে। অভিযোগ, গরুপাচারকারীরা অস্ত্রের পাচারের সঙ্গেও যুক্ত। পাচারের বিভিন্ন পদ্ধতির বিষয়ে জানতে পেরেছে এনআইএ। পাচারকারীরা জেএমবি এর সঙ্গে জড়িত বলেও কোনও কোনও মহলে অভিযোগ উঠেছে। তবে এ বিষয়ে বিশদে এখনও কিছু জানাতে রাজি হননি অফিসাররা।
দীর্ঘ দিন ধরেই গরু পাচার নিয়ে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে বিতর্ক হয়। কিছু দিন আগেও গরু পাচারকারী, এই অভিযোগে আসামে কয়েকজন বাংলাদেশি নাগরিককে পিটিয়ে মারা হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, সীমান্তে গরু পাচারের সঙ্গে বিএসএফ যে যুক্ত এতদিন তা ওপেন সিক্রেট সিবিআই সেই সত্যেই শিলমোহর দিয়েছে। সূত্র: ডয়েচে ভেলে।






সর্বশেষ সংবাদ
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
প্রতিষ্ঠাতা বীর মুক্তিযোদ্ধা জয়নাল হাজারী।   ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: গোলাম কিবরীয়া হাজারী বিটু্।   প্রকাশক: মোঃ ইব্রাহিম পাটোয়ারী।
সহ সম্পাদক- রুবেল হাসান: ০১৮৩২৯৯২৪১২।  বার্তা সম্পাদক : জসীম উদ্দিন : ০১৭২৪১২৭৫১৬।  সার্কুলেশন ম্যানেজার : আরিফ হোসেন জয়, মোবাইল ঃ ০১৮৪০০৯৮৫২১।  রিপোর্টার: ইফাত হোসেন চৌধুরী: ০১৬৭৭১৫০২৮৭।  রিপোর্টার: নাসির উদ্দিন হাজারী পিটু: ০১৯৭৮৭৬৯৭৪৭।  মফস্বল সম্পাদক: রাসেল: মোবা:০১৭১১০৩২২৪৭   প্রকাশক কর্তৃক ফ্ল্যাট নং- এস-১, জেএমসি টাওয়ার, বাড়ি নং-১৮, রোড নং-১৩ (নতুন), সোবহানবাগ, ধানমন্ডি, ঢাকা থেকে প্রকাশিত এবং সিটি প্রেস, ইত্তেফাক ভবন, ১/আর কে মিশন রোড, ঢাকা-১২০৩ থেকে মুদ্রিত।  বার্তা, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ০২-৪১০২০০৬৪।  ই-মেইল : [email protected], web : www.hazarikapratidin.com
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা বা ছবি অনুমতি ছাড়া নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি