শিরোনাম: |
ভারতে দুই যুগ ধরে জিম্মি বাংলাদেশি আমদানিকারকেরা
|
জেলা প্রতিনিধি ॥
দেশের সবচেয়ে বড় আর বেশি রাজস্বদাতা বেনাপোল বন্দর বাণিজ্যিক দিক দিয়ে যথেষ্ট সম্ভাবনাময়ী। তবে ভারত অংশে নানা অব্যবস্থাপনা আর অনিয়মে দীর্ঘদিন ধরে মারাত্মক ব্যাহত হচ্ছে এখানকার আমদানি বাণিজ্য। বেনাপোল বন্দরের ওপারে ভারতের পেট্রাপোল বন্দরের বনগাঁয় ট্রাক পার্কিং সিন্ডিকেটের হাতে প্রায় দুই যুগ ধরে জিম্মি বাংলাদেশি আমদানিকারকরা। ভারতের বিভিন্ন প্রদেশ থেকে ট্রাক আমদানি পণ্য নিয়ে পেট্রাপোল বন্দরে ঢোকার আগেই অর্থ বাণিজ্যের স্বার্থে সিরিয়ালের নামে পার্কিংয়ে জোর করে ২০ থেকে ২৫ দিন পর্যন্ত আটকে রাখা হচ্ছে। এতে বাণিজ্য সম্প্রসারণ যেমন ব্যাহত হচ্ছে, তেমনি লোকশানের মুখে পড়ে বেনাপোল বন্দর ছাড়ছেন ব্যবসায়ীরা। যার প্রভাব পড়ছে আমদানি পণ্যের দেশীয় বাজারে। এছাড়া সরকারের রাজস্ব আয় কমছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, অনেক চেষ্টা করেও সিন্ডিকেট মুক্ত হতে পারেননি তারা। তবে বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছেন, বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করছেন তারা। জানা যায়, ১৯৭২ সাল থেকে বেনাপোল বন্দরের সঙ্গে ভারতের পেট্রাপোল বন্দরের বাণিজ্যিক যাত্রা শুরু। এ বন্দর থেকে ভারতের প্রধান বাণিজ্যিক শহর কলকাতার দূরত্ব মাত্র ৮৪ কিলোমিটার। যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়ায় প্রথম থেকে দুই দেশের ব্যবসায়ীদের বাণিজ্যে আগ্রহ বেশি। এ পথে আমদানি পণ্যের মধ্যে অধিকাংশ রয়েছে শিল্পকারখানার জরুরি কাঁচামাল। হিসাব মতে একটি পণ্যবাহী ট্রাক কলকাতা থেকে রওনা দিয়ে বন্দর ও কাস্টমসের সব আনুষ্ঠানিকতা সম্পূর্ণ করে মাত্র ৫ ঘণ্টায় বেনাপোল বন্দরে পৌঁছানোর কথা। কিন্তু ভারতের পেট্রাপোল বন্দরের ওপারে বনগাঁ পৌরসভার নিয়ন্ত্রণাধীন কালিকতা পার্কিংয়ে সিরিয়ালের নামে হাজার হাজার টাকা অর্থ বাণিজ্য করে পণ্যবাহী ট্রাকগুলো ২০ থেকে ২৫ দিন আটকে রাখা হচ্ছে। এ সময় প্রতিদিনের জন্য দুই হাজার রুপি অর্থদ- যাচ্ছে ব্যবসায়ীদের। এছাড়া এ দীর্ঘ সময়ে যেমন পণ্য চালান আটকা পড়ে, তেমনি পণ্যের গুণগত মান নষ্ট হচ্ছে। সময় মতো পণ্য সরবরাহের অভাবে শিল্পকলকারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে ট্রাক চালকরাও। বিগত প্রায় দুই যুগ ধরে এ অনিয়ম চলে আসলেও সিন্ডিকেটের হাত থেকে কোনোভাবে মুক্তি মিলছে না ব্যবসায়ীদের। এতে এ বন্দর ছেড়ে অন্য বন্দরে চলে যাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। ফলে গত কয়েক বছর ধরে এ পথে যেমন আমদানি কমেছে, তেমনি সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে। আমদানি পণ্যবহনকারী ভারতীয় ট্রাক চালকেরা বলছেন, বেনাপোল বন্দরে প্রবেশের আগেই ইচ্ছের বিরুদ্ধে বনগাঁ কালিতলা পার্কিংয়ে সিরিয়ালের নামে পণ্যবাহী ট্রাক ১৫ থেকে ২০ দিন পর্যন্ত আটকে রাখা হয়। এতে তারা দ্রুত পণ্য নিয়ে বেনাপোল বন্দরে পৌঁছাতে পারেন না। এছাড়া তারা নানাভাবে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সাজেদুর রহমান জানান, বনগাঁ পার্কিংয়ে চাঁদাবাজির কারণে অনেক ব্যবসায়ীরা এ পথে আমদানি বন্ধ করেছেন। এতে ব্যবসায়ীদের ক্ষতির পাশাপাশি সরকারও রাজস্ব হারাচ্ছে। বিভিন্ন সময় এ নিয়ে অভিযোগ তুললেও আজ পর্যন্ত পরিত্রাণ পায়নি আমদানিকারকরা। বেনাপোল বন্দর ট্রাক ট্রান্সপোর্ট ইউনিয়নের সেক্রেটারি আজিম উদ্দীন গাজী জানান, বাংলাদেশ থেকে রফতানি বাণিজ্যে বেনাপোল বন্দর এলাকায় কোনো ট্রাক পার্কিং বা চাঁদাবাজি নাই। কিন্তু ভারত থেকে আমদানির সময় বনগাঁয় পার্কিং বানিয়ে নীরব চাঁদাবাজি করা হচ্ছে। অনেক চেষ্টা করেও এর কোনো প্রতিকার হচ্ছে না। বেনাপোল আমদানি-রফতানি সমিতির সহসভাপতি আমিনুল হক বলেন, পার্কিংয়ে দিনের পর দিন ট্রাক আটকে থাকায় যেমন পণ্যের গুনগতমান নষ্ট হচ্ছে, তেমনি শিল্পকলকারখানায় উৎপাদন কাজ ব্যাহত হচ্ছে। উচ্চ পর্যায়ে আলোচনা ছাড়া এ সমস্যা সমাধানের সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন জানান, প্রায় দুই যুগ ধরে ভারতীয় ট্রাক পার্কিং সিন্ডিকেটের হাতে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা জিম্মি হয়ে পড়েছে। ভারতীয় হাই কমিশনারসহ বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন জানিয়েও কোনো প্রতিকার পাচ্ছেন না। বেনাপোল স্থলবন্দরের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক আব্দুল জলিল জানান, ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে অভিযোগ পেয়ে বনগাঁ পার্কিংয়ের অনিয়মের ব্যাপারে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে অনেকবার কথা বলা হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে খুব দ্রুতই এর সমাধান হবে। উল্লেখ্য, দেশের চলমান ১২টি স্থলবন্দরের মধ্যে সবচেয়ে বড় আর বেশি রাজস্ব দাতা বেনাপোল বন্দর। বাণিজ্যিক দিক দিয়ে চট্টগ্রামের পরেই বেনাপোল বন্দরের অবস্থান। প্রতিবছর এ বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকার আমদানি বাণিজ্য হয়। যা থেকে সরকারের প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আসে। নানা সমস্যায় এ পথে আমদানি কমে যাওয়ায় গত তিন বছরে সরকারের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে রাজস্ব ঘাটতি হয়েছে ৪ হাজার ১০০ কোটি টাকা। |