শিরোনাম: |
ফেনীতে মশার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ শহরবাসী
|
ফেনী প্রতিনিধি ॥
সাধারণত বর্ষাকাল শুরু হলেই মশার উপদ্রব বৃদ্ধি পায়। কিন্তু এ বছর বর্ষাকাল শুরুর আগেই ফেনী বেড়েছে মশার উপদ্রব। প্রায় মাসখানেক ধরে পৌর এলাকার সর্বত্র ঝাঁকে ঝাঁকে মশা রাজত্ব বিস্তার করছে। রাতে তো বটেই দিনেও মশার যন্ত্রণায় বাসাবাড়ি, ঘরে বাইরে, এমন কি অফিসেও টেকা দায় হয়ে পড়েছে। সন্ধ্যার আগেই বাসার দরজা-জানালা বন্ধ করা হয়। কিন্তু পড়তে বসলেই মশা কামড়াচ্ছে বলে একটু পরপর বাচ্চাদের অভিযোগ। আবার মশারির ফাঁক গলে ঢুকে পড়া মশা মারতে গিয়ে রাতের ঘুম নষ্ট। শুধু রাতে নয়, দিনেও মশার উৎপাতে জীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠছে। বলছিলেন পৌরসভার সৈয়দনগর এলাকার নাজনীন সুলতানা নামে এক গৃহিনী। শুধু নাজনীনের পরিবার নয়, ফেনী পৌরসভার বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে বেশ কিছুদিন ধরে তারাও মশার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ। দিন ও রাতে সমানতালে চলছে মশার তান্ডব। মশার উৎপাত এতটাই বেশি যে জানালা-দরজা খুলে রাখার উপায় নেই। বিশেষ করে শহরের ডাক্তার পাড়া, নাজির রোড, একাডেমী এলাকা, পাঠানবাড়ি রোড, সৈয়দনগর, পুলিশ কোয়ার্টার, মাস্টার পাড়া, উকিল পাড়া এসব এলাকায় মশার উপদ্রব বেশি বলে জানান বাসিন্দারা। ঘরে, বাইরে, কর্মস্থলে সবখানেই মশায় অতিষ্ঠ তারা। শহরের উত্তর ডাক্তার পাড়ার বাসিন্দা সরকারি চাকুরিজীবী নুসরাত জাহান নাবিলা বলেন, জানুয়ারির শেষ থেকে মশার উৎপাত মাত্রাতিরিক্ত হারে বেড়েছে। সন্ধ্যার পর থেকে মশারি টাঙিয়ে বসে থাকতে হয়। পৌরবাসীরা বলছেন, সাধারণত বর্ষাকাল শুরু হলেই মশার উপদ্রব বৃদ্ধি পায়। কিন্তু এ বছর বর্ষাকাল শুরুর আগেই ফেনী বেড়েছে মশার উপদ্রব। প্রায় মাসখানেক ধরে পৌর এলাকার সর্বত্র ঝাঁকে ঝাঁকে মশা রাজত্ব বিস্তার করছে। রাতে তো বটেই দিনেও মশার যন্ত্রণায় বাসাবাড়ি ঘরে বাইরে, এমন কি অফিসেও টেকা দায় হয়ে পড়েছে। শহরের মিজান রোডের একটি মেসে বসবাসকারী অনার্স পড়ুয়া শিক্ষার্থী আবদুল আহাদ বলেন, মশার যন্ত্রণায় দরজা জানালা খেলা যায় না। পড়তে বসলে মশা কামড়ে স্থির থাকা যায় না। কয়েল, স্প্রে করলেও কোন লাভ হয় না। শহরের নাজির রোডের তৌহিদুল ইসলাম নামে এক বাসিন্দা বলেন, একে তো করোনার প্রাদুর্ভাব, অন্যদিকে চক্রবৃদ্ধি হারে বাড়ছে মশার প্রকোপ। তাই মশাবাহিত রোগ নিয়ে শংকায় রয়েছি। মশার প্রকোপ নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব পৌর কর্তৃপক্ষের হলেও তাদের কোন কার্যক্রম এখন পর্যন্ত চোখে পড়ে নি। পৌরবাসীরা বলছেন, পৌরসভার নালা নর্দমা নিয়মিত পরিষ্কার করা হয় না। তাই বদ্ধ পানিতে ব্যাপক হারে বংশ বিস্তার করছে মশারা। যদিও পৌর কর্তৃপক্ষ বলছে, নিয়মিত পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা অব্যাহত আছে। উপদ্রব বাড়লেও ফেনীতে এখনও কেউ মশাবাহিত রোগে আক্রান্ত হন নি বলে জানিয়েছেন ফেনী জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মো. ইকবাল হোসেন ভূঞা। তিনি বলেন, গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত করোনা ভাইরাস নিয়ে মানুষের শংকা বেশি। তাই মশাবাহিত রোগে আক্রান্ত তেমন দেখা যায়নি। মশার কারণে ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু, চিকনগুনিয়াসহ নানা রোগে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা রয়েছে। যেভাবে মশার প্রকোপ বাড়ছে তাতে ভয়ানক পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে বলে আশংকার কথা জানান তিনি। মশক নিধনে নালা-নর্দমা ও ডোবা নিয়মিতভাবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করার ওপর জোর দিয়েছেন ডা. ইকবাল হোসেন ভূঞা। তিনি বলেন, সামনে বর্ষার মৌসুমে নতুন পানি আসবে, এখনই যদি নালা নর্দমাগুলো পরিষ্কার না করা হয় তাহলে ডেঙ্গুসহ মশাবাহিত রোগ বেড়ে যাবে। দেশের বাইরে থেকে আনা হচ্ছে ঔষধ: সাধারণত নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত সময়ে মশক নিধনে বিভিন্ন এলাকায় ওষুধ ছিটাই পৌর কর্তৃপক্ষ। গতবছরও ফগার মেশিন দিয়ে মশক নির্মূলে স্প্রে ছিটিয়েছিল পৌরসভার পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা। তবে তা কার্যত তেমন কোন ভূমিকা রাখেনি বলে অভিযোগ পৌর বাসিন্দাদের। তারা বলেন, মশার ঔষধ ছিটালে তা এক-দুই দিন কার্যকর থাকে। তারপর আগের মতই উপদ্রব শুরু হয়। তবে সহসা মশক নিধনের প্রক্রিয়া শুরুর করার কথা জানিয়েছেন ফেনী পৌরসভার মেয়র নজরুল ইসলাম স্বপন মিয়াজী। স্বপন মিয়াজী বলেন, এ ব্যাপারে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। দেশের মশার ঔষধ আনলে দুই একদিনের মধ্যে আনা যায়, কিন্তু তা কার্যকরী ভূমিকা রাখবেনা। সেজন্য মশক নিধনে দেশের বাইরে থেকে উন্নতমানের ঔষধ আনা হচ্ছে। বেড়েছে কয়েলের চাহিদা: মশার উপদ্রব বেড়ে যাওয়ায় বেড়েছে কয়েল ও মশানিধক স্প্রে বিক্রি। ব্যবসায়ীরা বলছেন, কয়েকগুণ বেড়েছে কয়েলের চাহিদা। ফেনী বড় বাজারের বাংলা স্টেশনারীর সত্ত্বাধিকারী ওমর ফারুক বলেন, আগে যেখানে ৩ থেকে কার্টুন কয়েল বিক্রি হতো এখন ১০-১৫ কার্টুন বিক্রি হয়। তিনি বলেন, কয়েলের চাহিদা বাড়লেও দাম বেশী থাকায় মশা নিবারনকারী স্প্রে গুলোর চাহিদা এখনও তেমন বাড়েনি। বড় বাজারের খুচরা ব্যবসায়ী রমনী সাহা স্টোরের সত্ত্বাধিকারী মিন্টু সাহা বলেন, আগে দৈনিক ২ থেকে ৩ প্যাকেট কয়েল বিক্রি করতাম সেখানে এখন ১০-১২ প্যাকেট কয়েল বিক্রি হচ্ছে। মশার উপদ্রব বাড়ার সাথে সাথে কয়েলের বিক্রি বাড়লেও নিন্মমানের কয়েলে বাজারে সয়লাব অভিযোগ ক্রেতাদের। মশায় অতিষ্ঠ হয়ে শারীরিক ক্ষতির কথা জেনেও এসব কয়েল কিনতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। শহরের শহীদ শহীদুল্লা কায়সার সড়কের বাসিন্দা হাসিনা আক্তার বলেন, মশা বাড়ায় কয়েল কিনতে বাধ্য হচ্ছি। কিন্তু বাজারে নিন্মমানের কয়েল বিক্রি হওয়ায় তা শরীরের অনেক ক্ষতি হচ্ছে। কিন্তু না কিনে পারছি না। |