বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, 2০২4
ফেনীর ছাগলনাইয়ায় ভূতুড়ে বিদ্যুৎ বিলে দিশেহারা গ্রাহক
Published : Monday, 5 July, 2021 at 6:29 PM

ফেনী প্রতিনিধি ॥
ছাগলনাইয়া ভূতুড়ে বিদ্যুৎ বিলে দিশেহারা গ্রাহক। বার বার অভিযোগ দিয়েও প্রতিকার পাচ্ছে না গ্রাহকরা। তবে গ্রাহকদের এসব অভিযোগ ভিত্তি নেই বলে জানিয়েছে ছাগলনাইয়া পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের ডিজিএম জানে আলম। গ্রাহকদের সাথে আলাপ করে ও সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, একটি রাজনৈতিক দলের অঙ্গসংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতা মশিউর রহমান খোকন। লকডাউনে পৌরসভার বাঁশপাড়া ওয়ার্ডের বাড়ি আসেন চলতি বছর ২৭ জুন। ২৯ জুন তিনি তার বাণিজ্যিক মার্কেটের মিটারের বিল হাতে পান। বিল প্রস্তুতের তারিখ লেখা রয়েছে ১১ জুন, বিল পরিশোধের তারিখ ৩০ জুন। বিল প্রস্তুতের তারিখ ১১ জুন লেখা থাকলেও তিনি হাতে পেয়েছেন পরিশোধের তারিখের মাত্র এক দিন আগে। বিলও আগের মাস থেকে ৪০০ টাকা বেশি করা হয়েছে বলে খোকনের অভিযোগ।

তিনি বিকাশ, নগদ বা টেলিটকের মাধ্যমে বিল পরিশোধ করতে গেলে ঘটে বিপত্তি। পল্লী বিদ্যুৎ অফিস বিলটি অনলাইনে পরিশোধের ব্যবস্থা না করায় তিনি ৩০ জুন বিকেল পর্যন্ত বিল পরিশোধ করতে পারেননি। ফলে পল্লী বিদ্যুতের ধার্য জরিমানাসহ তাকে বিল পরিশোধ করতে হবে। না হলে বিনা অজুহাতে লাইন কেটে দিয়ে পুনঃসংযোগ ফি ৭০০ টাকা বাড়তি আদায় করার অভিযোগও আছে। এ রকম বিল পরিশোধের তারিখের দুদিন আগে বিল পেয়েছেন পশ্চিম ছাগলনাইয়ার আবুল বশর, মটুয়ার আবদুল মোমিন, দক্ষিণ সতর ওয়ার্ডের রবিউল হকসহ অনেকে। তারাও খোকনের মতো একই রকম অভিযোগ করেন। তবে তৌহিদ আহমেদ চৌধুরী নামে এক বাসিন্দা জানান, তিনি তার বড় ভাইয়ের মিটারের বিলের কপি হাতে পেয়ে মিটারের সঙ্গে মিলিয়ে দেখেন বিলে মিটারের চেয়ে ১০ ইউনিট বেশি লেখা। ছাগলনাইয়া জোনাল অফিসের বিলিং সুপার সুলতানা বেগম জানান, মিটার রিডারম্যান হয়তো না দেখে করেছে।

তিনি জানান, ৭০ হাজার গ্রাহকের বিপরীতে রিডিং নেওয়ার কর্মচারী অল্প কজন। প্রতিজনের বিপরীতে প্রায় পাঁচ হাজার রিডিং পড়ায় তারা মিটারের কাছে না গিয়ে অনুমাননির্ভর বিল করে বলে তিনি স্বীকার করেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন লাইনম্যান বলেন, ৭০ হাজার গ্রাহকের জন্য নূ্ন্যতম ৩০ জন স্থায়ী লাইনম্যান প্রয়োজন। সেই স্থানে আছে মাত্র ১২ জন। এর মধ্যে মাস্টাররোলে বা দৈনিক বেতন ভিত্তিতে জনবল নিয়োগ করায় অনেকে কাজ ঠিকমতো করে না। ফলে গ্রাহক ভোগান্তিতে পড়ে ঠিকমতো সেবা পাচ্ছেন না। অথচ বিল দিচ্ছেন ঠিকই। অনেক গ্রাহক অভিযোগ করেছেন, পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের সিস্টেম লসও গ্রাহকের বিলে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এতেও ভূতুড়ে বিলের সৃষ্টি হয়। পৌরসভার অলিমিয়া মুন্সি সড়কে অবস্থিত মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের জামাল উদ্দিন নামে এক শিক্ষকের বাসায় প্রতি মাসে বিল আসে ৮০০ থেকে এক হাজার টাকা। অথচ জুন মাসে তার বিল এসেছে ১২ হাজার টাকা।

বিষয়টি শিক্ষক জামাল উদ্দিন পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের ডিজিএমকে জানালে, তিনি বিল পরিশোধ করে দিতে বলেন। পরিশোধ না করলে লাইন বিচ্ছিন্ন করে জরিমানাসহ আদায় করা হবে বলে জানান। অভিযোগ বিষয়ে পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের ডিজিএম জানান, মিটার রিডারম্যান হয়তো ভুল করতে পারেন, তিনি তা সংশোধন করে দেওয়ার ব্যবস্থা করবেন। নুর হোসেন ডালিমসহ অনেক গ্রাহক জানান, তারা এর আগেও এ রকম ভূতুড়ে বিল পরিশোধ করতে বাধ্য হয়েছেন। না হয় মামলার হুমকি দেয় পল্লী বিদ্যুৎ অফিস। পাঠাননগরের বাথানিয়া গ্রামের গ্রাহক আবদুল মান্নান জানান, তার বকেয়া বিল না থাকলেও এবং সময় থাকা সত্ত্বেও বাড়িতে গিয়ে তাকে জুন মাসের বিল পরিশোধ না করায় পরিবারের সবার সামনে অপমান করে পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের মাঠ পর্যায়ের আদায়কারীরা।

পশ্চিম ছাগলনাইয়ার ভ্যানচালক মজিবুর রহমান জানান, পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের লোকজন তার বাসায় এসে এক মাসের ৫০৪ বকেয়া টাকা পরিশোধ করতে বলেন। মজিব দুপুরে বকেয়া পরিশোধ করে দেবেন বলে সময় চান। তারা সময় দিতে রাজি না হওয়ায় মজিব তাদের বলেন, আপনারা বিদ্যুৎ অফিসের লোক তার প্রমাণ কি?  আপনাদের অফিসের আইডি কার্ড দেখান তাহলে আমি ধার করে হলেও বিল পরিশোধ করব। এ কথা শুনে বকেয়া টাকা আদায়কারীরা মজিবকে শাসিয়ে চলে যান।

পরদিন পল্লী বিদ্যুতের লোকজন ভোরে গিয়ে ভ্যানচালকের মিটারটি কেটে নিয়ে আসেন। মজিবকে পল্লী বিদ্যুতের এক দালাল জানায়, জরিমানাসহ এক হাজার ৩২ টাকা ও মিটার পুনঃসংযোগ ফি ৭০০ টাকা লাগবে। এই টাকা পরিশোধ করলেও সাত দিন ধরে দালালসহ পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে ঘুরেও মিটার লাগাতে পারেননি মজিব। এক পর্যায়ে দালাল ও অফিসের লোকজন মজিবকে বলেন, তার ব্যবহার রূঢ় হওয়ায় ডিজিএমের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। ছাগলনাইয়া পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের ডিজিএম জানে আলম বলেন, ভ্যানচালক মজিব যে বেয়াদবি করেছে তা ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ। এ ছাড়া গ্রাহক কিছু অভিযোগ করলেও তা সত্য নয় বলে জানান তিনি।
আরও খবর


সর্বশেষ সংবাদ
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
প্রতিষ্ঠাতা বীর মুক্তিযোদ্ধা জয়নাল হাজারী।   ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: গোলাম কিবরীয়া হাজারী বিটু্।   প্রকাশক: মোঃ ইব্রাহিম পাটোয়ারী।
সহ সম্পাদক- রুবেল হাসান: ০১৮৩২৯৯২৪১২।  বার্তা সম্পাদক : জসীম উদ্দিন : ০১৭২৪১২৭৫১৬।  সার্কুলেশন ম্যানেজার : আরিফ হোসেন জয়, মোবাইল ঃ ০১৮৪০০৯৮৫২১।  রিপোর্টার: ইফাত হোসেন চৌধুরী: ০১৬৭৭১৫০২৮৭।  রিপোর্টার: নাসির উদ্দিন হাজারী পিটু: ০১৯৭৮৭৬৯৭৪৭।  মফস্বল সম্পাদক: রাসেল: মোবা:০১৭১১০৩২২৪৭   প্রকাশক কর্তৃক ফ্ল্যাট নং- এস-১, জেএমসি টাওয়ার, বাড়ি নং-১৮, রোড নং-১৩ (নতুন), সোবহানবাগ, ধানমন্ডি, ঢাকা থেকে প্রকাশিত এবং সিটি প্রেস, ইত্তেফাক ভবন, ১/আর কে মিশন রোড, ঢাকা-১২০৩ থেকে মুদ্রিত।  বার্তা, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ০২-৪১০২০০৬৪।  ই-মেইল : [email protected], web : www.hazarikapratidin.com
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা বা ছবি অনুমতি ছাড়া নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি