শিরোনাম: |
হাজারীর আত্মজীবনী(পর্ব-১০৯)
|
চাঁদার টাকা নয়, বালুমহলের আয়ে নির্বাচনী খরচ
![]() আমাদের সবকটি ইউনিয়নে পাঁচ হাজার কর্মীকে সভায় আসার পথ খরচ হিসেবে প্রতি সপ্তাহে ১০ টাকা করে দেয়া হতো। এতোও মাসে দুই লাখ টাকা লাগত। হাজারী কলেজের শিক্ষকদের বেতন দিতে বাড়তি ৫০ হাজার টাকার প্রয়োজন হতো। ড্রাইভার, বাবুর্চি, সহকারী ও অন্যদের বেতন বাবদ ৩০ হাজার টাকা। মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য প্রায় এক লক্ষ টাকা। পুরো জেলার সকল ইউনিয়নের নির্বাচিত মহিলা সদস্যদের মাসে পাঁচশত টাকা করে ভাতা দিতাম। এতে মোট পৌরসভাসহ ১৪১ জনকে ৭০,৫০০ টাকা ভাতা দিতাম, ব্যাডমিল্টন খেলোয়াড়দের পেছনে খরচ হতো ১০ হাজার টাকা। গাড়ির তেল ও বাজার খরচ লাগত ১৫ হাজার টাকা। এছাড়া গরিব-দুঃখী লোকজন অসুখে-বিসুখে, বিয়ে-শাদিতে, মামলা মোকদ্দমার খরচসহ আরও ৫০ হাজার টাকা লাগত মাসে। সাধারণত এইভাবে অধিকাংশ জনকল্যাণে ব্যয় প্রায় ১০ লক্ষ টাকা। এর সকল ব্যয় নির্বাহের জন্য বিভিন্ন ব্যক্তিকে বলা হয়েছিল। আমার মূল ব্যয়ের অর্ধেকটাই বহন করত বালুমহল যারা নিয়ন্ত্রণ করতো। এর বাইরেও কোনো কোনো সময় আরও দুই লক্ষ টাকা এরা যোগান দিত। এদের মাসে আয় ছিল কমপক্ষে বিশ লক্ষ টাকা। আমি এসবের হিসাব বেশ বুঝতাম না। ওরা যাই বলত তাই মেনে নিতাম। কেউ কেউ পরে আমাকে বুঝিয়েছিল ওদের আয়ের পরিমাণ আরও বেশি। বালু মহল বা নদী থেকে বালু তুলে যা বিক্রি করতে খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের নিকট থেকে নাম মাত্র মূল্যে লাইসেন্স বা অনুমতি নিতে হয়। হানিফ ও জাহাঙ্গীর আদেলের নামে লাইসেন্স নিয়ে অন্য ১০ জন মিলে পুরো জেলার বালুমহল নিয়ন্ত্রণ করত। এদের মধ্যে হাজারী, কুতুব, বেলাল, শুকদেব, বাসু, একরাম, লিয়াকত মাস্টার জড়িত ছিল। বর্ষাকালে বিভিন্ন নদীতে ভারতের অংশ থেকে স্রোতের সঙ্গে বাংলাদেশের সমতল ভূমিতে প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ বালু আটকা পড়ে। সেই বালু তুলেই বিক্রি করা হয়। বালু তোলার কিছু জটিলতা আছে। অভিজ্ঞ লোক ছাড়া এগুলো তুলতে পারে না। বালু তোলায় যা খরচ এবং বিভিন্ন জায়গায় পাঠাতে পরিবহন খরচ ছাড়া বাস্তবে অন্য কোনো খরচ নেই। ফলে বালুমহল ইজারাদারেরা মোটা অঙ্কের টাক আয় করলেও কোনো লোকই এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় না। ফলে এই আয়ে কোনোভাবে কেউ অবৈধ বলতে পারেনি। তবে এটা বলা যায় যে, সরকারের অমনোযোগ, গাফিলতি ও দুনীতির জন্য সরকার বড় অঙ্কের আয় থেকে বঞ্চিত হয়। সারাদেশে জামানতের টাকা লাইসেন্স ফি বাবদ সরকারের আয় বছরে বেশি হলে বিশ কোটি টাকা। কিন্তু সরকার এটাকে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করলে বছরে এক হাজার কোটি টাকা আয় করা সম্ভব বলে আমি মনে করি। পাহাড়ি অঞ্চলের পাথর উত্তোলনকে নিয়ন্ত্রণ করলেও সমপরিমাণ আয় করা সম্ভব। অন্যদিকে সকল বিভাগের ঠিকাদরদের কর্মকাণ্ড প্রধানত নিয়ন্ত্রণ করতো কুতুব। ঠিকাদারদের লভ্যাংশ থেকে কিছু অংশ সংগ্রহ করে কুতুবই প্রধানত আমাদের অন্য ব্যয় সমূূহের খরচ বহন করত। আমাদের আমলে ঠিকাদারদের চাঁদাবাজ মাস্তান ও ইঞ্জিনিয়ারদের হয়রানির শিকার হতে হয়নি। ফলে কাজ পাওয়া বা নেয়ার জন্য প্রতিযোগিতা বেশি ছিল। যেকোনো সময় বা যেকোনো লোক কোনো প্রকল্প প্রস্তাব নিয়ে আমার কাছে আসলে আমি চোখ বুজে তা সুপারিশ করে দিতাম। আমাদের সময় যেহেতু ঠিকাদারদের হয়রানির শিকার হতে হয়নি। তাই তাদের মধ্যে কোনো ক্ষোভ ছিল না। অতীতের বা বর্তমানে যে কোনো প্রকল্প কাজ সমাপ্ত করতে বিভিন্ন জটিলতার কারণে দীর্ঘ সময় কেটে যায়। আত্মকথায় আয়ব্যয়ের হিসাব প্রসঙ্গে আলোচনার হয়তো প্রয়োজন ছিল না। কিন্তু কিছুটা স্বচ্ছতা প্রমাণের জন্য এটা উল্লেখ করার তাগিত অনুভব করেছি। এসব আয়ের সব টাকা জনকল্যাণে ব্যয় করেছি। যেমন বিধবা ভাতা, শিক্ষক ভাতা, নির্বাচিত মহিলা জনপ্রতিনিধি ভাতা, মুক্তিযোদ্ধা ভাতা, কর্মীদের রাহা খরচ, অথাৎ আমাদের আয় ছিল যা ব্যয়ও করেছি তা। আমার ব্যক্তিগত খরচের টাকাটা সংসদের বেতন ভাতা থেকেই মিটে যেত। আমাদের বিরুদ্ধে হাজারও অপপ্রচার থাকলেও আমি বা আমার চাঁদাবাজি নিষিদ্ধ করেছিলাম। |