শিরোনাম: |
হাজারীর আত্মজীবনী (পর্ব-১১৫)
|
কাশেম ডাক্তারের মেয়েকে ধর্ষণের অভিযোগ ও আমার বাবার ক্ষোভ
কাশেম ডাক্তার সরকারি চাকরিতে ফেনীতে এসেছিলেন ষাটের দশকে। ডাক্তার হিসেবে অনেক খ্যাতিও অর্জন করেছিলেন। কিন্তু আপন শ্যালিকা রোকেয়ার সঙ্গে অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়লেন তিনি। এ খবর ছড়িয়ে পড়েছিল এলাকায়। রোকেয়া তখন ফেনী কলেজের ছাত্রী। অন্যদিকে এ ঘটনার পরে একটি মামলায় জড়িত হয়ে চাকরি হারালেন কাশেম মাস্টার। চাকরি হারালেও তিনি স্থায়ীভাবে এই এলাকাতেই রয়ে গেলেন। জায়গা কিনে বাড়ি করেছিলেন মিজান রোডের পশ্চিম পাশে। তিনি তিন ছেলে ও দুই মেয়ের বাবা ছিলেন। তার বড় মেয়ে ফেনী কলেজে পড়ত। সে ছিল খুব সুন্দরী। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় কাশেম ডাক্তারের ভূমিকা খুব খারাপ ছিল। স্বাধীনতার পর তিনি অনেকদিন পলাতক ছিলেন। যুদ্ধের পর অন্যত্র চলে যান। ১৯৭৩ সালে জেল থেকে বেরিয়ে এসে দেখি, অনেক রাজাকার ও আলবদরের সঙ্গে কাশেম ডাক্তারও প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। ১৯৭৪ সালে আবার জেলে যাওয়ার পর সর্বত্র রটে গেলে আমি কাশেম ডাক্তারের মেয়েকে সাতদিন আটকে রেখে ধর্ষণ করেছি। এই খবরটা কৌশলে বঙ্গবন্ধু ও আমার বাবা গণি হাজারীর কানেও দেয়া হলো। চট্টগ্রাম জেলে বাবা আমার সঙ্গে দেখা করে বললেন, অন্য বদনামগুলো মুছে যাবে কিন্তু কাশেম ডাক্তারের মেয়েকে নিয়ে যে বদনাম রটেছে সেটা কোনোদিন মুছবে না। যদিও এটা ছিল একটা ষড়যন্ত্রমূলক রটনা। তবুও বাবার সঙ্গে বিতর্ক করিনি। জেল থেকে ছাড়া পেয়ে একদিন শহীদ মিনারে বক্তৃতায় শুধু বলেছিলাম, আমি পশ্চিমদিকে অর্থাৎ কাবা শরীফের দিকে মুখ করে পবিত্র শহীদ মিনারে দাঁড়িয়ে চোখে হাত দিয়ে বলেছি, কাশেম ডাক্তারের মেয়েকে যদি চোখে দেখে থাকি তাহলে আল্লাহ যেন আমার দুটি চোখ চিরদিনের জন্য অন্ধ করে দেয়। এরপর দ্রুত বদনামটি মুছে যায়। আমি তিনবার এমপি হয়েছি কিন্তু কোনোদিন, এমনকি নির্বাচনের সময়ও আমার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা এই প্রসঙ্গে কোনো কথা তোলেনি। ডাক্তার কাশেম এতোটাই কট্টর রাজাকার ছিলেন যে, তিনি নিজের মেয়ের কলঙ্কিত হওয়ার ব্যাপারটিকে তোয়াক্কা না করে পরোক্ষভাবে মানুষকে বোঝাতেন ঘটনাটি সত্য। শুধু একজন মুক্তিযোদ্ধাকে কলঙ্কিত করার জন্য তিনি এই কৌশল নিয়েছিলেন। এটাকে নাক কেটে পরের যাত্রা ভঙ্গ বলা যায়। |